করোনাকালীন গ্রামীণ অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অব্যাহত ঋণ কর্মসূচি

898

।। একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ।।
ঢাকা, ১০ মার্চ, ২০২১ (বাসস): করোনাকালীন গ্রামীণ অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তাদের জামানতবিহীন ঋণ কার্যক্রম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ঋণ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এই ব্যাংক মহামারির মধ্যেও গ্রামীণ অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আকবর হোসেন বাসস’র সাথে আলাপকালে বলেন, করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী রাখতে গ্রামের লোকদের সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এ পর্যন্ত ৫৫,০০০ উদ্যেক্তার মাঝে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষত: নারী উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসাই এই ব্যাংকের মূল লক্ষ্য। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ব্যাংক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে।
তিনি জানান, “পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অন্যান্য প্রচলিত ব্যাংক থেকে আলাদা। এই ব্যাংক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আয়বর্ধক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে সহায়তা করে এবং সঞ্চয় গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে। এ ছাড়াও এ ব্যাংক সদস্যদের সঞ্চয় থেকে আবর্তিত ঋণ স্কিমের আওতায় তাদের ঋণ দেয়”।
আকবর হোসেন বলেন, ‘‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।’’
বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ৮৩ হাজার ৯১২টি সমিতির ৪১.৪৯ লাখ সদস্য পরিবার ১,৯০৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ব্যাংকটি ইতোমধ্যে উৎপাদন ভিত্তিক কর্মসংস্থানের জন্য ১২ হাজার ১৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ প্রদান করেছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ সার্ভিস সার্জে এসএমই, শস্য ঋণ এবং কোভিড কর্মসংস্থান খাতে ১,২১৬ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেছে।
যেসব ক্ষেত্রে এই ব্যাংক ঋণ দেয় সেসব হলো গরু মোটাতাজাকরণ, কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প, গাভী পালন, কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, নার্সারী, কৃষিভিত্তিক-শিল্পের জন্য নানা পণ্য উৎপাদন, শাক-সজ্বি এবং মশলা উৎপাদন।’
ঋণ গ্রহিতাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনার ওপর ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সর্বাধিক ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, মধ্যম উদ্যোক্তাদের ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা এবং বিশেষ উদ্যোক্তাদের ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়। এসব ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ।
এই ব্যাংক আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালন, নার্সারী ও কৃষি খাতের বিভিন্ন আয়বর্ধক কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য কার্যকরভাবে মজুত ও বিপণনের লক্ষ্যে গুদাম নির্মাণের জন্য ঋণ দিয়ে সদস্যদের সহায়তা করে।
প্রত্যন্ত দ্বীপ মনপুরার ¯œাতক পাশ মোঃ শাহীন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। হাসিব কম্পিউটার এবং স্টুডিও এর মালিক শাহীন জানান, “আমি ¯œাতক পাশ। তবে আমি চাকুরীর জন্য চেষ্টা করিনি। উদ্যেক্তা হওয়া আমার স্বপ্ন ছিল। তাই আমি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ঋণ গ্রহণ করি এবং একটি মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার খুলি”।
এখন শাহীন নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে। তার স্টুডিওতে আরও চার জন শ্রমিক কাজ করছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সহায়তায় তার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পেরেছে।
অন্যান্য অনেক উদ্যেক্তার মত প্রত্যন্ত নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দা মোঃ মহিউদ্দিন এবং মোঃ ফখরুল ইসলামের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। করোনা পরিস্থিতিতেও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সহায়তা অব্যাহত রাখায় তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্যদের ব্যাংকিং সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক দারিদ্রতা দূরীকরণে বিরাট ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য, আমাদের সুবিধাভোগী নির্বাচন, সেবা ও যাচাই বাছাই কার্যক্রমে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।