কর বিরোধের ক্ষেত্রে আপীলের বিধান পুনর্বহালের প্রস্তাব

330

ঢাকা, ৯ মার্চ, ২০২১ (বাসস): কর বিষয়ক বিরোধের ক্ষেত্রে আপীলের বিধান পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন সভাকক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে আলোচনায় সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন,বর্তমানে কর বিষয়ক কোন বিরোধের ক্ষেত্রে রিভিশনের বিধান যোগ করা হয়েছে। যেক্ষেত্রে আগে আপীল করার ব্যবস্থা ছিল। এখন সমস্যা হলো যথাযথ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং আমরা আগের অবস্থা অর্থ্যাৎ আপীলের বিধান পুনর্বহাল করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফির হার কমানোর প্রস্তাব করেন।
আলোচনায় এমসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক-কর বিষয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ১০৭টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এমসিসিআইয়ের ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান আদিব এইচ খান প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বা বর্তমান মূসক আইনে অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে বা ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়নের স্বার্থে ২০১২ এর মূল আইনে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন। তিনি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রমোশনাল এক্সপেন্স সীমা নির্ধারণ ধারা অবলোপনের প্রস্তাব করেন। তিনি আরো বলেন, প্রমোশনাল এক্সপেন্স সীমা নির্ধারণ করার কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আদিব এইচ খান বলেন, ট্যাকসেস আপীলাত ট্রাইবুনালে হাইকোর্ট ডিভিশনে রেফারেন্স মামলা দায়েরের পূর্বশর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট হারে কর জমা দেয়ার বিধান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কর জমাদানের পরিবর্তে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের শর্ত আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি।
অন্যদিকে বাজেট আলোচনায় আগামী অর্থবছরের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের সেবা খাতে বিশেষ করে বুটিক, বিউটি পার্লার, খাবার ব্যবসার ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। একইসাথে নারীদের জন্য ব্যক্তিগত আয়কর সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্থলে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করে সংগঠনটি।
সংগঠনের সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
তিনি গত বছর থেকে চলমান করোনা ভাইরাস মহামারির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পুনরায় শুরু করার পর থেকে আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর মওকুফের পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রথম তিন বছর ভ্যাট ও আয়কর মওকুফের সুপারিশও তুলে ধরেন।
এদিন বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) বিদ্যুৎচালিত মোটর সাইকেল ও অন্যান্য মটরযান আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব করে। একইসাথে সংগঠনটি চীনের সাথে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য সামগ্রীর সামঞ্জস্যপূর্ণ নামকরণ কোড (এইচএস কোড) ৮ ডিজিটের পরিবর্তে ৬ ডিজিট করার প্রস্তাব করেন।
এর আগে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ইন্ডিয়া বাংলোদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী হচ্ছে প্রতিবেশি ভারত থেকে বিভ্ন্নি কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে পরিবহণ সমস্যায় পড়েছে। এ জন্য তিনি পেট্রোপল পর্যন্ত রেল সংযোগ দেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন।
একই সময়ে এনবিআরের সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনায় মিলিত হয়ে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) তামাক পণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাসে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তামাকপণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক নিয়মিত বৃদ্ধির সুপারিশ করে।
আত্মা‘র পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনটির সদস্য মনির হোসেন চৌধূরী। এসময় তিনি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর তামাক পণ্যের ওপর নিয়মিত শুল্ক বৃদ্ধির সুপারিশ দিয়ে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য উৎপাদনকারীকে করজালের আওতায় আনার পরামর্শ রাখেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম যৌক্তিক প্রস্তাবনাসমূহ বাজেটে অন্তর্ভূক্তির আশ্বাস দেন। এমসিসিআইয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কোন কর কর্মকর্তার ভুল এ্যাসেসমেন্টের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হোক, সেটি আমরা একেবারে চাই না। এ বিষয়টি রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে নিবিড় মনিটারিং করা হবে বলে তিনি জানান।