বাসস দেশ-৯ : রাজধানীর পশুর হাট এবার দেশি গরুর দখলে

138

বাসস দেশ-৯
পশুর হাট-রাজধানী।
রাজধানীর পশুর হাট এবার দেশি গরুর দখলে
॥ মো. সাজ্জাদ হোসেন ॥
ঢাকা, ১৯ আগস্ট, ২০১৬ (বাসস) : ঈদের আর মাত্র দুইদিন বাকি। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুরহাটগুলো। এবার লক্ষ্যণীয় হলো হাটগুলোতে দেশি গরুর যোগান আগেরবারের চেয়ে বেশি।
ঈদের তিন দিন আগ থেকে এসব হাটে কোরবানির পশু বেচা-কেনার অনুমোদন দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সেই হিসেবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পশুর হাটগুলোর আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা শুরু হয়েছে আজ রোববার থেকে। চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।
রাজধানীতে এবার মোট ২৫টি স্থানে পশুরহাট বসেছে। হাটে ঢোকার পথে ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা গরু, ছাগল ও মহিষের শারীরিক পরীক্ষা করছেন।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকায় মোট ২৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় মোট ১৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত হয়েছে। ৭টি ইজারা ও ৮টি খাস বা স্পট ইজারার ভিত্তিতে এ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়।
ইজারা দেয়া ৭টি হাট হচ্ছেÑ মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা ও শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা।
আর খাস (নিজেরাই খাজনা আদায় করবে) এমন ৮টি হাট হচ্ছে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের খালি জায়গা, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্ব রোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনিরআখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ার টেক মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, গোলাপবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগ্যপুর নগর (মেরাদিয়া মৌজা) লোহারপুলের পূর্ব অংশ ও খোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ডেমরা আমুলিয়া মডেল টাউন ও আশেপাশের খালি জায়গা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গাবতলী স্থায়ী পশুরহাট ছাড়াও অস্থায়ী ৯টি হাট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএস’র উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্টি সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) হাট, তেজগাঁও শিল্প এলাকার পলিটেকনিক্যাল কলেজ মাঠ, উত্তরখান হাট এবং গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট।
প্রতিদিনই বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হাটে আসছে ট্রাক ভর্তি গরু-ছাগল। প্রতিদিনই হাটে গরুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেশি গরুর। তবে অধিকাংশ ক্রেতাদের অভিযোগ হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠলেও দাম গত বছরের তুলনায় ঢের বেশি। গরু প্রতি অন্তত ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি হবে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ভারতীয় গরু না আসায় দাম একটু বাড়তি। এখন বিক্রি একটু কম হলেও আগামী তিন দিন গরু-ছাগল বিক্রি বেশি হবে বলে মনে করছেন তারা।
জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গায় পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায় হাটের বেশিরভাগ অংশই ভরে গেছে কোরবানীর গরু, মহিষ ও ছাগলে। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর চাহিদা বেশি। কোরবানির জন্য মানুষ ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার গরুই পছন্দ করছেন। এই হাটে ১৫ হাজার গবাদিপশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে হাটে গরু নিয়ে এসেছেন গরু ব্যবসায়ী আলমগীর। তিনি বাসস’কে বলেন, গরুর দাম এখনো তুলনামূলক বেশি। তবে এখনো সঠিক দাম মূল্যায়ন করা সম্ভব না। কারণ শেষ দুই দিনে গরুর সংখ্যাই দাম নির্ধারণ করে দেয়। কোন কারণে গরুর ঘাটতি হলে বেড়ে যায়।
এ হাটের এক পেশাদার গরু ব্যবসায়ী সোহেলের মতে, শেষ দুইদিনই পশুর হাটে দাম উঠানামা করে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তবে আগামীকাল থেকে বাজার আরো জমবে বলে তার বিশ্বাস।
রাজধানীর ভাসানটেক গরু ছাগলের হাটে গিয়ে দেখা যায়, এই হাটটিও দখল করে নিয়েছে দেশি ছোট গরুতে। কুষ্টিয়ার বেপারী খালেক মিয়া বলেন, গতকাল তিনি ১২টি গরু ও ১০টি ছাগল হাটে তুলেছেন। এরমধ্যে ৩২ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করতে পারায় তিনি খুশি।
মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, তিনি শুক্রবার রাতে ১৬টি ছাগল হাটে তুলেছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত তিনটি বিক্রি করেছেন।
বাসস/এসপিএল/এমএসএইচ/১৬৩০/-এইচএন