রোনাল্ডোর শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে রক্ষা পেলো মাদ্রিদ, বুফনের লাল কার্ড

331

মাদ্রিদ, ১২ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর স্টপেজ টাইমের পেনাল্টিতে জুভেন্টাসকে বিদায় করে কোনরকমে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম লেগে তুরিনের মাঠে রোনাল্ডোর দুই গোলে স্বাগতিক জুভেন্টাসকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে সেমির পথে এক পা দিয়ে রেখেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু গতকাল ঠিক তার বিপরীত ফলাফলে জুভেন্টাস যখন সানতিয়াগো বার্নাব্যুর মাঠে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় তখন চ্যাম্পিয়নস লীগের সবচেয়ে বড় অঘটনের শঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইতিহাস মাদ্রিদের পক্ষেই গেছে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থেকে নাটকীয় ভাবে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে গ্যালাকটিকোরা।
মাত্র একদিন আগেই আরেক স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনাকে যেভাবে সিরি-আ লীগের আরেক দল রোমা অবিশ্বাস্য এক জয়ে বিদায় করে দিয়ে শেষ চারে উঠেছিল গতকাল ঠিক তারই পুনরাবৃত্তির পথে ছিল জুভেন্টাস। কিন্তু রোনাল্ডোর পাসে ম্যাচের ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে লুকাস ভাসকুয়েজ পেনাল্টি আদায় করে নিলে তার থেকে দলকে হতাশ করেননি পর্তুগীজ তারকা। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ক্ষুব্ধ আচরণ দেখিয়ে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন জুভ অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গিয়ানলুইজি বুফন। জুভেন্টাসের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগে ক্যারিয়ারের ১১৭তম ম্যাচে এসে প্রথমবারের মত লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করলেন বুফন। অনেকেরই ধারণা এটাই তার ক্যারিয়ারের শেষ চ্যাম্পিয়নস লীগের ম্যাচ।
তুরিনে প্রথম লেগের পরে অনেকটাই নিশ্চিত ম্যাচে হঠাৎ করেই প্রাণ ফেরান মারিন মানজুকিজ। প্রথমার্ধে হেডের সাহায্যে তার দেয়া দুই গোলেই জুভেন্টাস দারুনভাবে ম্যাচে ফিরে আসে। ৬০ মিনিটে ডগলাস কস্তার ক্রস থেকে কেইলরস নাভাসের ভুলে ব্লেইস মাতৌদি যখন পা বাড়িয়ে দিয়ে বল জালে জড়ান তখন মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির দল অন্য এক উচ্চতায় ভাসতে থাকে। নিষেধাজ্ঞার কারনে কাল মাঠে ছিলেননা মাদ্রিদ অধিনায়ক সার্জিও রামোস। আর সে কারনেই রক্ষনভাগে অন্যতম ভরসা রামোসকে হারিয়ে কাল নাভাসও ছিলেন বেশ নার্ভাস। ইনজুরি টাইমের কিছু আগে মাদ্রিদ অনেকটাই চেপে বসেছিল জুভেন্টাসের রক্ষনভাগের ওপর। তারই ধারাবাহিকতায় ডি বক্সের ভিতর ডানদিক থেকে রোনাল্ডোর পাসে গোলপোস্টের সামনে ভাসকুয়েজকে বল ধরতে দেয়নি মেধি বেনাটিয়া। কিন্তু বিষয়টি মোটেই পছন্দ করেননি ইংলিশ রেফারী মাইকেল অলিভার। ক্ষুব্ধ বুফন তেড়ে এসে রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে লাল কার্ড দেখানো হয়। তার স্থানে ক্যারিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে মাঠে নামেন ওজিচেচ সিজিসনি। স্পট কিক থেকে রোনাল্ডো কোন ভুল করেননি। এই নিয়ে এবারের আসরে সর্বোচ্চ ১৫টি গোল করলেন সিআর সেভেন।
প্রথম লেগে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকে ফিরতি পর্বে একটি সুনির্দিষ্ট সূচনার প্রয়োজন ছিল জুভেন্টাসের। মাত্র ৭৬ সেকেন্ডে দলকে এগিয়ে দিয়ে মানজুকিচ কোচের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। ডগলাস কস্তার থেকে সামি খেদিরার দারুন ক্রসে মানজুকিচের শক্তিশালী হেড আটকানোর সাধ্য ছিলনা নাভাসের। এর কিছুক্ষন পরেই কস্তার ক্রস থেকে গঞ্জালো হিগুয়েইনের শট রুখে দেন নাভাস। করিম বেনজেমার স্থানে মূল একাদশে নামা গ্যারেথ বেলও প্রথম থেকেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তার ব্যাকহিল অবশ্য আটকাতে বুফনকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। ১৩ মিনিট পরে রোনাল্ডোর শট আটকানোর চেষ্টায় বুফনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শুরুটা ভাল না হলেও ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নেয় মাদ্রিদ। কিন্তু ৩৭ মিনিটে স্টিফেন লিচেস্টেইনারের ডান-উইং ক্রস থেকে মানজুকিচ আবারো হেডের সাহায্যে ব্যবধান দ্বিগুন করলে মাদ্রিদ শিবিরে হতাশা নেমে আসে। টনি ক্রুসের ফ্রি-কিক থেকে রাফায়েল ভারানের হেড ক্রসবার দিয়ে বাইরে চলে যায়।
বিরতির পরে কাসেমিরো ও বেলের স্থানে মার্কো আসেনসিও ও লুকাস ভাসকুয়েজকে মাঠে নামান রিয়াল বস জিনেদিন জিদান। ৬০ মিনিটে নাভাসের সবচেয়ে বড় ভুলে জুভেন্টাস তৃতীয় গোলের দেখা পায়। কস্তার ক্রস থেকে নাভাসের হাত ফসকে বল এগিয়ে আসা মাতৌদির পায়ের স্পর্শ লেগে জালে জড়ালে জুভেন্টাস শিবির উল্লাসে ফেটে পড়ে। ২০১৬ সালের নভেম্বরের পরে ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারের এটাই প্রথম গোল।