ভোলার পশুর হাটগুলোতে দেশী গরু-ছাগলের চাহিদা বেশি

229

ভোলা, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : আসন্ন পবিত্র কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলার পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। এবারে হাটগুলোতে দেশী গরু-ছাগলের চাহিদা বেশি রয়েছে। ঈদের আর মাত্র ৩দিন বাকি থাকায় এখানকার প্রায় ১’শ হাট এখন জমজমাট। প্রাকৃতিকভাবেই জেলায় অসংখ্য ছোট-বড় দ্বীপ (চর) রয়েছে। এসব দ্বীপে ১২মাস সবুজ ঘাস খেয়ে অধিকাংশ গরু হৃষ্ট-পুষ্ট করা হয়। তাই দেশী গরু-ছাগলের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক সব সমই বেশি থাকে। ছোট-মাঝারি, বড়সহ বিভিন্ন আকারের গরু-ছাগল নিয়ে ব্যাপারী ও গৃহস্থ বিক্রেতারা এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে। তাই শেষ সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষা-কষি ও হাঁক-ডাকে মুখরিত পশুর হাটগুলো।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের ভোলার হাট, ব্যংকের হাট, ইলিশার হাট, পরানগঞ্জ হাট, গজারিয়ার হাট, ভেলুমিয়া হাট, গুইঙ্গার হাট, বাংলাবাজার হাট, বোরহানউদ্দিনের খায়ের হাট, কুঞ্জের হাটসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায় ব্যাপক দেশী গরু-ছাগলের সমাহার ঘটেছে। তবে বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি রয়েছে হাটগুলোতে। এছাড়া হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যেগে মেডিকেল টিম কাজ করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিক্রেতারা জানান, কোরবানি ঘনিয়ে আসায় হাটে পশু বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। সাধারনত ছোট গরু ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। মাঝারি গরু ৬৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা এবং বড় গরু ১ লাখ অথবা এর উপরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট ছাগল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, মধ্যম সাইজ ছাগল ৯ থেকে ১৩ হাজার টাকা ও বড় ছাগল ১৫ হাজার টাকার উপরে দাম রয়েছে।তারা আরো জানান, অধিকাংশ দেশী গরুকে সবুজ ঘাস, ভাত, খৈল ভুষির পাশাপাশি ইউরিয়া সার-চিটাগুর-খড় মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। খামারিদের পাশাপাশি স্থানীয় গৃহস্তদের পালিত প্রচুর মোটা-তাজা গরু উঠেছে হটে। কোন রকম ক্ষতিকর উপাদান ছাড়াই এসব গরু হৃষ্ট-পুষ্ট করা হয়।
ভোলার হাটে আলীনগর গ্রাম থেকে মো: রুবেল নিজের লালন করা একটি বিশাল গরু নিয়ে এসেছেন। দাম চান ২ লাখ টাকা। দীর্ঘ ৩ বছর যাবত তিনি গরুটিকে পালন করেছেন। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত গরুটির দাম উঠেছে। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে তিনি গরুটি বিক্রি করবেন। ইলিশা থেকে আসা ফারুক মাঝি ৪টি বড় গরু ও ১০টি মাঝারি গরু নিয়ে এসেছেন। নিজের খামারে তিনি সম্পূর্ন বৈজ্ঞানিকভাবে মোটা-তাজা করেছেন গরুগুলোকে। তিনি জানান, তার সবচে বড় গরুটির দাম চাচ্ছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। দাম উঠেছে ১ লাখ ২৫ পর্যন্ত। অন্য ৩টি’র মধ্যে ১টির দাম চান ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আর ২টি মুল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে চাচ্ছেন। এছাড়া মাঝারিগুলোরে দাম ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে এবারের পশুর হাটে গরুর পাশাপাশি ছাগলের সরবরাহ চোখে পড়ার মত। আকর্ষণীয় রং, শিং ও আকারের ছাগল নিয়ে জমজমাট ছাগলের হাট। ইলিশার হাটে ছাগল নিয়ে আসা খামারি আব্দুর রহমান বলেন, তিনি মাঝারি আকারের ১৫টি দেশী ছাগল নিয়ে এসেছেন। ৯ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে এগুলোর মূল্য ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮টি ছাগল বিক্রি করেছেন তিনি। বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি তিনি। কলেজ ছাত্র রবিন মাহমুদ হাটে এনেছেন বিরাট এক ছাগল। দাম চেয়েছেন ২৭ হাজার টাকা। তবে ২২ হাজার টাকা হলে তিনি বিক্রি করবেন।
এদিকে এবছর জেলায় কোরবানিতে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর। এবছর কোরবানির জন্য সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ পশু। আর মজুত রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ। যা গত বছরের তুলনায় ১০ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মোট প্রায় ১৫’শ খামারে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে পশু মোটা-তাজা করা হচ্ছে। এর বাইরেও পারিবারিকভাবে জেলায় মজুতের চেয়ে বেশি বেশি পশু রয়েছে। সে হিসাবে জেলায় চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণেরও অধিক পশু রয়েছে।
জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ আলমগীর বাসস’কে জানান, জেলায় কোরবানিতে যে সংখ্যক পশু মজুত আছে, তাতে ঈদে পশুর কোন ঘাটতি থাকবেনা। হাটে রুগ্ন, অসুস্থ বা ইঞ্জেকশন দেওয়া গরু যাতে না প্রবেশ করতে পারে সে জন্য ৭ উপজেলায় ৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সচেষ্ট আছে। তিনি আরো বলেন, ইন্ডিয়া বা অন্য জেলা থেকে এখানে গরু আনার দরকার পড়েনা। বরং এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় গরু পাঠানো হয়।
গরু কিনতে আসা আব্দুল মান্নান ও আইয়ুব আলী বাসস’কে বলেন, এ বছর গরুর দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। হাটগুলোতে প্রচুর গরুও রয়েছে। তারা ৬৫ হাজার টাকায় একটি গরু ক্রয় করেছেন। হাটের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
এছাড়া পশুর হাটগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সূপার (এসপি) মো: মোকতার হোসেন জানিয়েছেন, পোশাকধারী পুলিশ, ডিবি, ডিএজবি পুলিশের পাশাপাশি হাটগুলোর আশ-পাশে সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া পুলিশের ৫’শ ফোর্স মাঠে কাজ করছে। হাটগুলোতে খোলা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। স্থাপন করা হয়েছে জাল টাকা শনাক্তকরন মেশিন।