নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেশ কিছু নির্দেশনা

1058

ঢাকা, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রাজধানীতে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার স্বল্পসময়ে উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শহরে চলাচলের সময়ে গাড়ির মূল দরজা বন্ধ রাখা, অটো সিগন্যাল এবং রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালুসহ বেশকিছু নির্দেশনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট’ বৃহস্পতিবার ১৬ আগস্ট এক সভায় ‘ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এদিন অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোঃ নজিবুর রহমান।
সভায় নিরাপদ সড়ক ও মহাসড়কের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে চলমান কার্যক্রমের উপর বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়।
সুপারিশে পরিবহন ব্যবস্থপনা নিয়ে বলা হয়, ঢাকা শহরে চলমান সকল গণপরিবহন (বিশেষত বাস) শহরে চলাচলের সময়ে গাড়ির মূল দরজা বন্ধ রাখা এবং বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী উঠা-নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়াও গণপরিবহনে (বিশেষ করে বাস) দৃশ্যমান দু’টি স্থানে চালক এবং হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত, সকল মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দুইজন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট পরিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ ও সিগন্যালসহ ট্রাফিক আইন মানার জন্য বাধ্য করার ব্যাপারেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় সব সড়কে বিশেষত মহাসড়কে চলমান সব পরিবহনে (দূরপাল্লার বাসে) চালক এবং যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার এবং পরিবহন কোম্পানিগুলোকে সীট বেল্ট সংযোজনের নির্দেশনা প্রদান করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
পরিবহন ব্যবস্থাপনার এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০ আগস্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিআরটিএ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয় , ঢাকা শহরের সড়কে যে সকল স্থানে ফুট ওভার ব্রিজ বা আন্ডার পাস রয়েছে সে সকল স্থানের উভয় পাশে একশ’ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিককে ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ফুট ওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসসমূহে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্ডার পাসসমূহে প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি স্থাপন করা এবং আন্ডারপাসের বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করা যাতে নাগরিকরা স্বচ্ছন্দে এবং নিরাপদে স্থাপনাসমূহ ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হন তার জন্য ব্যবস্থা নিতে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
সভায় ঢাকা শহরের সকল সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাত হকার মুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ সকল সড়কের নামফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজন করার সিদ্ধান্তও হয়।
ট্রাফিক সপ্তাহে চলমান সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যথাসম্ভব অব্যাহত রাখা, স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ঢাকা শহরে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালুকরণসহ সব সড়কের ডিভাইডার উচ্চতা বৃদ্ধি করে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডিভাইডারের উপর দিয়ে না নিচ দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী করে তোলার ব্যাপারেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়াও মহাখালী ফ্লাইওভার-এর পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (আপ এবং ডাউন) ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিনিয়ত দৈব চয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা। শহরের জন্য সকল স্থানেও প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ী অনুরূপ কাজের জন্য মোবাইল কোর্ট, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
গভায় বলা হয়, ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি বা আরম্ভ হবার প্রাক্কালে অপেক্ষাকৃত বয়ঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বিএনসিসি’র সহযোগিতা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
পরিবহনের ফিটনেস এবং লাইসেন্স প্রসঙ্গে বলা হয়, অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ফিটনেস প্রদান প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দর্শনপূর্বক ফলপ্রসু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও রুট পারমটি/ফিটনেস বিহীন যানবাহন সমূহকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘লারনার ’প্রদানের প্রাক্কালেই ড্রাইভিং টেস্ট নেয়া যেতে পারে এবং উত্তীর্ণদের দ্রুততম সময়ে লাইসেন্স প্রদান করা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিআরটিএ কে দায়িত্ব প্রদান করা হতে পারে।
সভায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনসাধারণকে অবহিত করার লক্ষ্যে সকল প্রচার গণমাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কনটেন্টের বিষয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে নির্দেশনা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ ছাড়াও আগামীকাল ১৮ আগস্ট সকাল ১০ টা হতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), সিনিয়র সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ, সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহাপরিচালক (জিআইইউ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এয়ারপোর্ট সড়ক হতে নগর ভবন পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয় ।
ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে ইতোপূর্বে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট পুনরায় বিশ্লেষণ করে পুনরায় একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বরাবর উপস্থাপন করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।