চায়না-বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টার সরকারের কাছে হস্তান্তর

693

ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস): রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে নির্মিত চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্চিনিয়ারিং করপোরেশন। চীনের আর্থিক অনুদান ও কারিগরি সহযোগিতায় এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে।
রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারো (ইপিবি)’র কাছে এক্সিবিশন সেন্টারটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও চীন সরকারের উদার সহযোগিতার কারণে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ভেন্যু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। চীন তাদের নির্মাণ কাজ শেষ করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এক্সিবিশন সেন্টারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এক্সিবিশন সেন্টারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করায় বাণিজ্যমন্ত্রী চীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন,আশা করি এখন থেকে বছরব্যাপী এই সেন্টারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মেলা ও পণ্য প্রদর্শনী চলবে। ইপিবিও এখানে প্রতি বছর মেলার আয়োজন করবে। আমাদের এক্সিবিশন সেন্টার না থাকার কারণে বছরব্যাপী নিজস্ব রপ্তানি পণ্যের কোন প্রদর্শনী কেন্দ্র ছিল না। এখন নিজস্ব রপ্তানি পণ্য প্রদর্শন করার সুযোগ হলো।
টিপু মুনশি আরও বলেন, চীন বর্তমানে বাংলাদেশের ৮ হাজার ২৫৬টি রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুযোগ দিয়েছে। আমরা চীনে বর্তমানে তৈরী পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, মাছ প্রভৃতি রপ্তানি করছি। শুল্কমুক্ত রপ্তানি প্রবেশাধিকার সুবিধা দু’দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাংলাদেশকে চীনের বিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে বলেন, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার। সেখানে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা রয়েছে।
গুনগত মানের পণ্য তৈরি ও রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় এই বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টার বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশী পণ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এক্সিবিশন সেন্টারের উদ্দেশ্য হলো– দেশী-বিদেশী পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকমানের একটি কমন প্ল্যাটফরমে নিয়মিত ও সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করা। একই প্ল্যাটফরমে সারা-বছর পণ্য-ভিত্তিক মেলা ও সাধারণ বাণিজ্য মেলার পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে।
পূর্বাচল নতুন শহরে ২০ একর জমির উপর নির্মিত চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেডশীপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫ লাখ টাকা টাকা। এর মধ্যে চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
৩৩ হাজার বর্গমিটারে ফ্লোর স্পেসের মধ্যে বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গ মিটার, এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গ মিটার, এতে ৮০০টি স্টল রয়েছে। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গ মিটার, গাড়ি পার্কিং করা যাবে ৫০০টি। এছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা জায়গায় আরও ১,০০০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
৪৭৩ আসন বিশিষ্ট ১টি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসন বিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ৬টি নেগোশিয়েশন মিটিং রুম, ৫০০ আসনের রেস্টুরেন্ট, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের রুম, ২টি অফিস রুম, মেডিকেল বুথ, ডরমেটরি ও গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক এড্রেস সিস্টিম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিএটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই, আধুনিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, আলাদা রেজিস্ট্র্রেশন হল, আধুনিক ফোয়ারা, ইন বিল্ট পতাকা স্ট্যান্ড এবং ইলেক্ট্রনিক প্রবেশ গেইট রয়েছে।