স্থায়ী হাটে রূপ নিয়েছে মিরাশার চাষি বাজার

652

।। এস এম মজিবুর রহমান ।।
শরীয়তপুর, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : জেলার জাজিরা উপজেলার মিরাশার চাষি বাজারটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কৃষকদের স্বার্থকে সামনে রেখে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বাজারটি খোলা মাঠে শুরু হলেও এক যুগ পরে এখন রূপ নিয়েছে স্থায়ী অবকাঠামোয়। গত চার বছর থেকে স্থাপনা তৈরী শুরু হয়ে এক যুগের ব্যবধানে খোলা মাঠের এ কৃষি বাজার এখন ৭০ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ স্থায়ী হাটে রুপ নিয়েছে। কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এর প্রভাবে জাজিরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
কৃষিপণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালে ৩২ শতক জমির ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ প্রয়াসে মিরাশার চাষি বাজারটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে এর আয়তন ৬৬ শতক। এক যুগের ব্যবধানে মিরাশার চাষি বাজারটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কৃষি বাজারে পরিণত হয়েছে। মধ্যস্বত্তভোগী না থাকায় কৃষকরা এ বাজারে কৃষি পণ্য বিক্রি করে বেশি লাভবান হয়। সারা বছর বাজারটি চালু থাকলেও শীতের সবজির ভরা মৌসুমে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কৃষক, পাইকার ও ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত থাকে। শীতের সময় প্রতিদিন এখানে গড়ে ৩-৪ কোটি টাকার পণ্য বেচা-কেনা হয়। যা গত তিন বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ বাজারের সবজি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের আকন কান্দি গ্রামের মো: চুন্নু কাজি বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি আমাদের মতো ছোট কৃষকদের জন্য আশির্বাদ। এ বাজারটি প্রতিষ্ঠার আগে আমাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতে কষ্ট হতো। আবার যে বাজারে যেতাম তাদেরকেও খাজনাও দিতে হতো। কিন্তু এ বাজারে আমাদের কাছ থেকে কোন খাজনা আদায় করা হয় না। তাই আমরা তুলনামূলক এখন বেশি লাভ পাই।
একই উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক মো: ্আলমগীর খান বলেন, বাজারটি কৃষি মাঠের পাশে ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় আমাদের নিয়মিত শ্রমিকের কাজ শেষ করে অবসর সময়েই পণ্য নিয়ে অতি সহজেই বাজারে এসে বিক্রি করতে পারি। যাতায়াত খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি আমাদের ক্ষেতের কৃষি কাজেরও কোন ক্ষতি হয় না।
মিরাশার চাষি বাজার সমবায় সমিতির নিয়মিত পাইকার মো: জলিল মিয়া বলেন, এ বাজারের করলা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাচামরিচ, ফুলকপি, বাধাপকি, পটলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচা-কেনা হয়। এ সকল সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশর্^বর্তী জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নেয়। এ বাজারে টাটকা ও নিরাপদ সবজি পাওয়া যায় বলে চাহিদাও বেশি। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৬৫-৭০ মণ করলা ঢাকার কারওয়ান বাজারে যায়। সেখান থেকে পরে বাছাই করে ২৫-৩০ মণ করলা অন্য বড় পাইকারের মাধ্যমে বাহরাইন, দুবাই ও ইটালীতে রপ্তানী হচ্ছে। ফলে কৃষকদের পাশা পাশি আমরাও তুলনামুলক বেশি লাভবান হচ্ছি।
বাজার কমিটির সহ-সভাপতি মো: ইসমাইল মোল্লা বাসস’কে বলেন, কৃষক ও পাইকারদের হয়রানি বন্ধে বাজার কমিটি নিয়মিত মনিটরিং করছে। কোন অভিযোগ বা সমস্যা থাকলে তাৎক্ষণিক তার সঠিক সমাধান দেয়া হয় বলে পাইকাররাও এখানে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও সমবায় অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষকদের কল্যাণে পরিচালিত হচ্ছে এ কৃষি বাজারটি। এ বাজারের সুনাম এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জামাল হোসেন বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় কৃষকরাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। তার উপরে এখন যুক্ত হয়েছে পদ্মা সেতুর সোনালী প্রভাব। আশা করছি পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্যদিয়ে জাজিরাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।