বাজিস-২ : নড়াইলে দেশীয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারীরা

136

বাজিস-২
নড়াইল-খামার
নড়াইলে দেশীয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারীরা
নড়াইল, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : নড়াইলের দেশি গরুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশীয় পদ্ধতিতে জেলার খামারীরা গরু মোটাতাজা করে তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। এসব গরুর মাংসের চাহিদ অনেক । প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার খামারীরা ও কৃষকেরা গরু মোটাতাজা করে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে নড়াইল সদরের মির্জাপুর, চাকই, সিংগাশোলপু, গোবরা, কমখালি, শাহবাদ, সিমানন্দপুর, জুড়–লিয়া। লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, চাচই, কোলা, কুমড়ি, দিঘলিয়া, মল্লিকপুর, মাকড়াইল, লাহুড়িয়া। কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া, মহাজন, টোনা, খাশিয়াল, বাবরা, গ্রামের কৃষক ও খামারীরা অন্যন্য এলাকা থেকে বেশি গরু মোটাতাজা করছে। জেলায় মোট যে গরু মোটাতাজা করা হয় তার ৩৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে খামারীরা আর বাকি ৬৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে জেলার সাধারণ কৃষকেরা। প্রতিটা কৃষকের গোয়াল ঘরে তাদের হালের গরুর পাশাপাশি একটি দুটি করে মোটাতাজা করণ গরু রয়েছে। আর এসব গরু কোরবানিকে সামনে রেখে মোটাতাজা করছে তারা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের শুরুতে দেশীয় প্রজাতির প্রতিটি বাছুর ১২-১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করে পালন করতে থাকে। সারা বছর খাবার হিসাবে কাজের ফাঁকে বিল থেকে কাঁচা ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো হয় এবং ঈদের ২ মাস পূর্বে খড়, খৈল, কুড়া, ও ভুষি খাওয়ানো হয়। বছরে যে খাবার লাগে অধিকাংশ খাবারই বিলের কাঁচা ঘাষ। এই ঘাঁস ক্রয় করা লাগে না তাই খরচ অনেক কম হয়। একটি বাছুর ১২-১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করে সারা বছর পোষার পরে ঈদের সময় আকার ভেদে ৪০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রয় হয়। কৃষকেরা প্রতিটা গরু থেকে বছর শেষে আকার ভেদে ৩০-৫০ হাজার টাকা লাভ করে।
নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এসর হাটে নগদ টাকায় গরু বিক্রয় করেন। ১১টি হাটের মধ্যে জেলায় মোট ৪টি বড় হাট রয়েছে, মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া গরুরহাট, শিয়েরবর গরুরহাট, এবং পুরুলিয়া গরুরহাট। এখানে বিভিন্ন জেলার বেপারিরা এসে এখানকার গরু ক্রয় করে ট্রাকে নিয়ে ঢাকা,সিলেট, চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। বর্তমানে এ জেলায় খামারি, কৃষক ও বেপারিরা হিসেবে রয়েছে জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।
খামারিরা জানান, গত বছর দেশের বাইরে থেকে বিদেশী গরু নড়াইলের কম এসেছিল। তাই দেশীয় গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। আমরা খামারিরা ও স্থানীয় কৃষকেরা নিজেদের গরু ভাল দামে বিক্রয় করতে পেরেছি। লাভ খুব ভাল হয়েছিল। আশা করছি সরকার এ বছর ও বিদেশী গরু আমদানী করবে না। সরকার যদি বিদেশী গরু আমদানি না করে তাহলে আমরা খামারিরা ভাল দাম পাব।
সদরের মির্জাপুর এলাকার কৃষক আমিনউদ্দিন শেখ জানান, আমি গত বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ২ বাছুর ৩৮ হাজার টাকায় ক্রয় করেছিলাম, ১১ মাস পালন করে কোরবানির আগে ১লক্ষ ২৩ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছি। খরচ বাদে আমার ৬৫ হাজার টাকা লাভ হয়।
মাইজপাড়া গ্রামের লিটন বিশ^াস বলেন, এ বছর আমি ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি এঁড়ে বাছুর ক্রয় করে পালন করছি। গরু অনেক বড় হয়ে গেছে। আশা করছি কোরবানি সামনে রেখে ৪টি গরু ৩ লাখ টাকার বেশি বিক্রয় করতে পারবো।
জেলা প্রানি সম্পদ অফিস সুত্রে জানা গেছে, দেশীয় পদ্ধতিতে চাষীরা গরু মোটাতাজা করেন তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। আকার ভেদে গত বছর প্রতিটা গরু ৩০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছে এখানকার চাষিরা। গড়ে প্রতিটা গরু ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রয় করলেও গত বছর ২১ হাজার গরু প্রায় ৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিক্রয় হয়েছে। আর এবছর ২২ হাজার গরু প্রায় ৯৯ কোটি টাকা বিক্রয় হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কমকর্তা ডা. মো. মারুফ হাসান বলেন, চলতি বছরে ৩১ হাজার পশু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। যার মধ্যে ২৩ হাজার ৪শ দেশী গরু, ৭ হাজার ৬শ’ ছাগল। এ বছরও তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর জেলায় অন্তত ১ হাজার পশু বেশি মোটাতাজা করছে খামারিা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হয় বলে জানান তিনি।
বাসস/সংবাদদাতা/১৪১০/-মরপা