এলএনজি পরিবহনের লক্ষ্যে ৬টি ট্যাংকার ক্রয় করছে বিএসসি

769

ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস): লিক্যুয়িড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনের লক্ষ্যে বড় আকারের ছয়টি এলএনজি ট্যাংকার/ক্যারিয়ার ক্রয় করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২৫), রূপকল্প ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ২০৩০ এবং ব্লু-ইকোনমি (সুনীল অর্থনীতি) ধারণার আলোকে বিএসসি ৬টি জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
প্রতিটি ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার ধারণ ক্ষমতার দু’টি, প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ঘন মিটার ধারণ ক্ষমতার দু’টি এবং প্রায় প্রতিটি ১ লাখ ৮০ হাজার ঘন মিটার ধারণ ক্ষমতার দু’টি সহ মোট ৬টি ট্যাংকার সংগ্রহ করা হবে।
৬টি ট্যাংকার ক্রয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার ধারণ ক্ষমতার দু’টির মূল্য ৩ হাজার ৫৪২ কোটি, ১ লাখ ৭৪ হাজার ঘন মিটার ধারণ ক্ষমতার দু’টির মূল্য ৩ হাজার ৫৩০ কোটি এবং ১ লাখ ৮০ হাজার ঘন মিটার ধারণ ক্ষমতার দু’টির মূল্য ৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।
আজ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিএসসি কর্তৃক এলএনজি জাহাজ ক্রয়ের প্রস্তাবের বিষয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির, জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব সেখ আকতার হোসেন, পেট্রোবাংলার পরিচালক আলী মো. আল মামুন, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাবেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিএসসি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিএসসির জন্য এলএনজি ট্যাংকার/ক্যারিয়ার ক্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহের ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট এন্ড কন্সট্রাকশন) প্লাস শিপ ফাইনান্সিং ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর গত ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্তের আলোকে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মহেষখালী দ্বীপের কাছে দেশের দু’টি এলএনজি টার্মিনাল এবং এক বা একাধিক স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের প্রেক্ষিতে এলএনজি ট্যাংকার ক্রয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জাহাজগুলো দিয়ে বছরে প্রায় ১৯ মিলিয়ন ঘন মিটার (৬.৭১ মিলিয়ন টন) এলএনজি পরিবহন করা সম্ভব হবে। এলএনজি পরিবহন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিএসসি তথা রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশী জাহাজের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। জ্বালানি নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে। মেরিটাইম সেক্টরে দক্ষ লোকবল সৃষ্টিসহ চাকুরির সুযোগ তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কয়েকটি দেশের ১৪টি প্রতিষ্ঠান এলএনজি ট্যাংকার সংগ্রহে আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, সরকার বিএসসিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চীনের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে ৬টি জাহাজ সংগ্রহ করেছে। সংগৃহিত জাহাজগুলো হলো- এম.ভি বাংলার জয়যাত্রা, এম.ভি বাংলার সমৃদ্ধি, এম.ভি বাংলার অর্জন, এম.টি বাংলার অগ্রযাত্রা, এম.টি বাংলার অগ্রদূত এবং ‘এম টি বাংলার অগ্রগতি’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বিএসসি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালে ‘বাংলার দূত’ ও ১৯৭৩ সালে ‘বাংলার সম্পদ’ অর্জনের মাধ্যমে বিএসসি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সর্বমোট ৩৮টি জাহাজ সংগ্রহ করেছিল। বয়সজনিত কারণে এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রয়/হস্তান্তরের পর দু’টি জাহাজ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে ৬টি নতুন জাহাজ সংগ্রহের ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে ৮টি জাহাজ রয়েছে।