বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও উন্নয়ন অব্যাহত রেখে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী : ড. হাছান মাহমুদ

673

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি ২০২১(বাসস) : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ, দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের উন্নয়নের ধারা সচল রেখে বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি আজ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
গত ১৮ জানুয়ারি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেন। গত ১৯ জানুয়ারি চিফ হুইপ নুর- ই- আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এ প্রস্তাব সমর্থন করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেখানে করোনা মহারির সংকটে আর্থ- সামাজিকভাবে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ১লাখ ২১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার প্রনোদনা দিয়ে করোনা সংকটের মধ্যেও সাধারণ মানুষের জীবন মান এবং আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থা সচল রেখেছে। যার ফলে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং উপমহাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এ সময়ে পৃথিবীর সব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশে জিডিপি গ্রোথ পজিটিভ। আর তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা তৃতীয়।
তিনি বলেন, যেই দেশে মানুষের ঘনত্ব সর্বোচ্চ, কৃষি জমির পরিমাণ ও মাথাপিছু পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। যে দেশে ঝড়, বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তন নিত্যসঙ্গী সেই করোনা মহামারির মধ্যে পৃথিবীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ অবস্থান বিশাল অর্জন। প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ওপরে রয়েছে গায়ানা এবং সাউথ সুদান। এ দুটি দেশের লোকসংখ্যা কম এবং অর্থনীতির আকারও ছোট। সেদিক বিবেচনায় আনলে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে রয়েছে।
আশপাশের দেশের সাথে তুলনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১০, পাকিস্তানে মাইনাস ০ দশমিক ৩৮, শ্রীলংকা মাইনাস ৪ দশমিক ৫৫, ভুটানে প্লাস ০ দশমিক ৫৭, নেপাল ০ দশমিক ০২, আফগানিস্তান মাইনাস ৫। অর্থাৎ আশপাশের সকল দেশে মাইনাস কোন কোন দেশে প্রায় একই জায়গায় রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, আমেরিকার বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের মতে করোনা মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এ উপমহাদেশে তৃতীয় এবং পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ২০তম।
মন্ত্রী বলেন, তারপর বিএনপি এবং তার মিত্ররা এ সাফল্য স্বীকার করতে না চাইলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এক সময় কৃষি নির্ভর দেশ হিসাবে আমরা ধনী ছিলাম। যখন পৃথিবীর অর্থ ব্যবস্থা শিল্প নির্ভর হয়ে গেল আমাদের থেকে যখন কাঁচামাল নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো চড়া দামে শিল্প পণ্য আবার আমাদের কাছে বিক্রি করা শুরু করল তখন আমরা দরিদ্র হয়ে গেলাম। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ দৃশ্যপট আবার উল্টে দিতে চাই। আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ আবার উন্নত দেশে রূপান্তরিত হব, আমরা ধনী দেশে রূপান্তরিত হব।
তিনি বলেন, আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে ধনী হব তা নয়। আমরা আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করব। যে প্রজন্ম শুধু বাংলাদেশকে উন্নয়ন করবে তা নয় সেই প্রজন্ম পৃথিবীকে পথ দেখাবে।
মন্ত্রী বলেন, এই করোনা মহামারির মধ্যে অনেকে বড় বড় কথা বলেন। অনেকে নয়াপল্টনে অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো কোন রাজনৈতিক দল এই করোনার সংকটের মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কারণে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েকজন সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী লীগের প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি নেতা-কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া অনেক সংসদ সদস্যসহ মন্ত্রিসভার এক তৃতীংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।তারা সুস্থ্য হয়ে আবার কাজে নেমে পড়েছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে সংকটের সময়ও আশান্বিত করেছেন। দেশ পরিচালনায় আশান্বিত করেছেন, শুধু তাই না সেই আলোয় দেশকে উদ্ভাসিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির ফলে এখন আর গ্রমে আর কুড়ে ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। কবিতায় কুড়ে ঘর আছে। বাস্তবে সেগুলো এখন টিনের চালা ঘর না হয় আধাপাকা ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত একটি দেশ ছিল। ২০২১ সাল আসার আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর হবে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।