ভাষণে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন-অগ্রগতির সাফল্য আর বিজয় গাঁথা তুলে ধরা হয়েছে : বাণিজ্যমন্ত্রী

839

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভাষণে সরকার সূচিত এক যুগের সফল কর্মকান্ডের ফলে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন-অগ্রগতির সাফল্য আর বিজয় গাঁথা তুলে ধরা হয়েছে।
আজ ছিল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার ৮ম দিন।
গত ১৮ জানুয়ারি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেন। গত ১৯ জানুয়ারি চীফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এ প্রস্তাব সমর্থন করেন।
আজ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা উত্তর টেবিলে উপস্থাপন ও ৭১ বিধিতে নোটিশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এর পর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শুরু হয়।
আজ আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু,পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ,ক,এম এনামুল হক শামীম, সরকারি দলের নূর মোহাম্মদ, শেখ সালাউদ্দিন, গাজী মো. শাহনেওয়াজ, মোর্শেদ আলম, শফিকুল ইসলাম শিমুল, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্ল্যা, নেসার আহমেদ, আশেক উল্লাহ রফিক, হাবিব হাসান, জুয়েল আরেং, বেগম সেলিমা আহমাদ, বেগম নার্গিস রহমান,জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শামীম হয়দার পাটোয়ারী, বেগম সালমা ইসলাম, এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতিটি লাইনে সে উন্নয়ন অগ্রগতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি দেশের বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৯০ সালে দেশের জাতীয় অর্থনীতির আকার ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২০ সালে এটা দশ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০০৮-‘০৯ অর্থবছরে দেশের বাজেটের আকার ছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা, ২০২০ সালে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ কোটি টাকা, ‘৯০ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের আকার ছিল ৯৬১ মিলিয়ন ডলার, আর ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩. ৬ বিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে রফতানি খাতের আয় ছিল ৪৭ বিলয়ন ডলার, করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে এবার এ লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
টিপু মুনশি বলেন, এসময়ের দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। অথচ এ সেতু নিয়ে দেশি-বিদেশি মহল নানা ষড়যন্ত্র করেছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আমরা পাইনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সাহসের সাথে নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেন। সে দৃঢ়তার কাছে সব হীন ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে। আজ পদ্মা সেতু শেষের পথে। এর মধ্য দিয়ে জাতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটা জাতিকে আত্মনির্ভরতায় বলিয়ান হয়ে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে। জাতি হিসাবে এটা আমাদের সব চেয়ে বড় অর্জন। পাশাপাশি এ সেতু চালু হলে জতীয় অর্থনীতিতে ১.৫ ভাগ অবদান বাড়বে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষ নেতৃত্বে সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২০ সালে দেশের ৫.২২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এটা বিশ্বের মধ্যে ৩ নম্বরে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত এক যুগের উন্নয়ন অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নত- সমৃদ্ধ দেশের দ্বারপ্রান্তে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশ বিশ্বে উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হবে।
তিনি করোনাকালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া দেশের খাদ্য পরিস্থিতিসহ সার্বিক কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য সংসদ সদস্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের সংবিধানে উল্লেখিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ পাঁচটি মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসাবে মুজিববর্ষে দেশের প্রায় ৯ লাখ গৃহহীনকে গৃহ প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে ইতোমধ্যে গৃহ দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন বাস্তব। এর সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিনত হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, এ মহামারিতে যখন গোটা বিশ্ব পর্যদুস্ত তখন প্রধামন্ত্রীর বলিষ্ট ও দক্ষ নেতৃত্ব এবং সময়োপযোগি পদক্ষেপের ফলে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
সংসদ সদস্যরা বলেন, এসব পদক্ষেপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় প্রশংসিত হয়েছে। এ জন্য বিশ্বে ৮ জন সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া আমেরিকার সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের সমীক্ষায় বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ করোনাকালের সাফল্যের দিক থেকে ২০তম স্থান অর্জন করে।