অবিশ্বাস্য জয়ে বার্সেলোনাকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমিফাইনালে রোমা

375

রোম, ১১ এপ্রিল ২০১৮ (বাসস) : বার্সেলোনার বিপক্ষে ঘরের মাঠ স্তাদিও অলিম্পিকোতে গতকাল চ্যাম্পিয়নস লীগের দ্বিতীয় লেগে ৩-০ গোলের অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়েছে রোমা। এর মাধ্যমে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোলে ড্র থাকলেও এ্যাওয়ে গোলের সুবিধায় বার্সেলোনাকে বিদায় করে দিয়ে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান সর্বোচ্চ লীগের শেষ চার নিশ্চিত করেছে ইতালিয়ান জায়ান্টরা। অথচ প্রথম লেগে ক্যাম্প ন্যুতে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার পরে চ্যাম্পিয়নস লীগে রোমার টিকে থাকার স্বপ্ন প্রায় শেষই হয়ে গিয়েছিল। ৮২ মিনিটে কোস্তাস মানোলাসের গোলে রোমার জয় নিশ্চিত হয়।
গত সপ্তাহে বার্সেলোনার মাঠে মানোলাস ও অধিনায়ক ড্যানিয়েল ডি রোসির আত্মঘাতি গোলে রোমা ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছিল। তারই প্রতিদান হয়ত দিলেন এই দুই রোমা তারকা। ম্যাচ শেষের আট মিনিট আগে দুর্দান্ত হেডে গ্রীস ডিফেন্ডার মানোলাসের গোলে রোমা যখন ম্যাচে সমতা ফেরায় তখন পুরো স্টেডিয়াম যেন উল্লাসে ফেটে পড়ছিল। সতীর্থদের উচ্ছাসের সাথে ডাগ আউটে কোচ ইউসেবিও ডি ফ্রান্সেসকোকে তখন মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর এই গোলেই হতবাক হয়ে যায় পুরো বার্সা শিবির।
সিরি-আ ক্লাবের এই ঐতিহাসিক রাতের মূল নায়ক মানোলাস ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘দিনের শেষে মূল কথা হচ্ছে বিশ্বের সেরা একটি দলকে হারিয়ে আমরা সেমিফাইনালে উঠেছি। আমাদের সকলেরই নিজেদের উপর বিশ্বাস ছিল। প্রথম লেগের দূর্ভাগ্যজনক অধ্যায় আমরা মোটেই মাথায় আনিনি।’
বিরতির ১৩ মিনিটে পরে ব্যবধান দ্বিগুন করেন প্রথম লেগের খলনায়ক ডি রোসি। পেনাল্টি থেকে তার গোলের পরেই মূলত রোমা সমর্থকরা বিশ্বাস করা শুরু করে এই ম্যাচেও জয় সম্ভব। এর আগে এডিন জেকোর ছয় মিনিটের প্রথম গোলেরও মূল কারিগর ছিলেন স্থানীয় নায়ক ডি রোসি। তার এগিয়ে দেয়া দারুন এক পাসেই বসনিয়ান জেকো বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানকে পরাস্ত করেন। ম্যাচ শেষে ডি রোসি বলেছেন, ‘এই জয় আমাদের জন্য কি অর্থ বহন করে সেটা কল্পনারও অতীত। শুধুমাত্র এটুকু জানি আজ আমরা যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।’
ক্যাম্প ন্যুর মতই প্রথম থেকেই দারুন আগ্রাসী ছিল রোমা। তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের শুরুতেই স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন জেকো। ডি রোসির দারুন পাসে জেকো কোন ভুল করেননি। যদিও বার্সা ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতিকে এই গোলের জন্য দায়ী করা যেতে পারে। ৫৮ মিনিটে রোমা ব্যবধান দ্বিগুন করে। জেরার্ড পিকে ডি বক্সের ভিতর জেকোকে ফাউলের অপরাধে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে ডি রোসি রোমাকে আরো এগিয়ে দেয়। এই গোলের পরেই মূলত রোমা সমর্থকরা বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়ে তুলে। আর এতেই বার্সা শিবির আরো বেশী চাপে পড়ে। ৬৯ মিনিটে ডি রোসির একটি হেড গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। ১০ মিনিট পরে স্টিফেন এল শারাভির শট অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন টার স্টেগান। ৮২ মিনিটে আলেক্সান্দার কোলারোভের কর্ণার থেকে মানোলাসের হেড আটকানোর সাধ্য ছিলনা বার্সা গোলরক্ষকের। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই ম্যাচে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী হয় রোমা। ১৯৮৪ সালের পরে এই প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়নস লীগের শেষ চারও নিশ্চিত হয়। ঐ আসরে ঘরের মাঠে লিভারপুলের কাছে পরাজিত হয়ে শিরোপাটা অবশ্য হাতছাড়া হয়েছিল।
বিদায়ের পরে বার্সা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে বলেছেন, ‘এই পরাজয়ের পুরো দায়ভার আমার। আমি দল সাজিয়েছি, তাদের প্রস্তুত করেছি। আমরা জিতি বা হারি, গত সপ্তাহের একই দল নিয়ে আমি মাঠে নামতাম। তারপরেও বলতে হয় এই পরাজয় হতাশার। সব কিছু ভুলে আমরা সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করবো। এখন আমাদের অবশ্যই এই ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আরো প্রতিযোগিতা আছে, আমাদের উচিৎ সেগুলো জয় করা। কারন এখনো আমরা কিছুই জিততে পারিনি।’