বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মোমেনের আহ্বান

584

ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আজ বলেছেন, বাংলাদেশের মতো সামাজিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সকল দেশের জন্য জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টির বাস্তব পরিস্থিতিতে রয়েছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন (জিসিএ) এর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন কেন্দ্র (আইসিসিএসিডি) আয়োজিত গ্লোবাল গবেষণা সম্মেলনের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখছিলেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি-মুন, সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন এবং সাবের হোসেন চৌধুরী এবং জিসিএ’র প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক প্যাট্রিক ভি ভেরকুইজেননও অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
ড. মোমেন বলেন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে বাংলাদেশ তার দেশীয় চমৎকার অভিযোজনমূলক কার্যকলাপের জন্য বিশ্ব স¤প্রদায় কর্তৃক অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। তবে তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে অভিযোজনের একটি সীমা আছে এবং দায়িত্বশীল দেশগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন না করলে আমরা চিরকাল আমাদের অভিযোজন ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে পারি না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সীমিত মোকাবেলা করার ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ একটি অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকির দেশ, যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের কোন অবদান নেই। বৈশ্বিক উচ্চ ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদ সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে এটিকে ‘প্ল্যানেটারি ইমার্জেন্সি’ বলে অভিহিত করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সামলাতে বিশ্ব নেতৃত্বকে ‘যুদ্ধের ভিত্তিতে’ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন অভিযোজনমূলক উদ্যোগের বিষয়ে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আমরা এটিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্মুখভাগে থাকা বাংলাদেশীরা অভিযোজন সমাধান বের করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্ভাবনী উল্লেখ করে মোমেন অবশ্য বলেন, সম্পদ এবং কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থার অভাব প্রায়শই স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় অভিযোজন ব্যবস্থার নকশা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দ্বিতীয় মেয়াদে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ ফোরামের নেতৃত্বে আসার মাধ্যমে সম্মানিত হয়েছে এবং ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অভিযোজন বিষয়ক গ্লোবাল সেন্টারের আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাগতিক জিসিএ দক্ষিণ এশিয়া অফিস হিসাবে, ঢাকা বাংলাদেশে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং উত্তর-দক্ষিণ জ্ঞান বিনিময়ে ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন অভিযোজন বিষয়ে একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
মোমেন বলেন, সরকার আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সারা দেশে ১ কোটি ১৫ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছে। সরকার একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ সংগঠিত করতে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালু করেছে। এদিকে সম্প্রসারিত এনডিসিসমূহ কঠোরভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মিডনাইট ইনিশিয়েটিভ’ ঘোষণা করেছেন।