বাসস দেশ-৪৮ : অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা চান মোমেন

289

বাসস দেশ-৪৮
মোমেন-অভিবাসী-জিএফএমডি
অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা চান মোমেন
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ (বাসস) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ ঢাকায় পার্লামেন্টারি কশাস অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘ভার্চুয়াল প্রি-জিএফএমডি ২০২০ ন্যাশনাল কনসালটেশন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির এই সংকটপূর্ণ সময়ে বহু অভিবাসী শ্রমিক চাকরী হারিয়েছেন। এই অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনির বাইরে থাকায় তারা অনেক দুর্ভোগ ও কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।
মোমেন বলেন, বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিককে জনাকীর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)-কে আরো অধিকার-ভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া এবং কার্যকারী আন্তর্জাতিক অভিবাসন পরিচালনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিবাসন নীতিমালায় সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা উচিৎ।
এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য দেশগুলোর সামাজিক ও বিচারিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় অভিবাসী শ্রমিকদের অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি উল্লেখ করে মন্ত্রী শ্রমিকদের বেতন, স্বাস্থ্য ও চাকরী নিরাপত্তার জন্য প্রাথমিক পর্যায়েই অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মোমেন বলেন, ‘আর এই লক্ষ্যে জিএফএমডি’র মতো প্লাটফরমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে করে অভিবাসী শ্রমিকরা বিদেশে আইনী সুরক্ষার আওতায় আসে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন (জিসিএম)-কে কার্যকারীভাবে বাস্তবায়নে জিএফএমডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। জিসিএম অভিবাসীদের সুরক্ষায় একটি মাইলফলক পদক্ষেপ।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এদেরকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ একটি অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশের বহু মানুষ বাস্তুচূত হচ্ছে। আমরা তাদের জলবায়ু অভিবাসী হিসেবে উল্লেখ করি।’
মোমেন বলেন, যদি সমুদ্রের পানি আর এক মিটার বৃদ্ধি পায়, তবে আমার দেশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন লোক গৃহহীন হয়ে পড়বে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে একা এই বিপুল সংখ্যক গৃহহীন মানুষকে সামাল থেকে সম্ভব নয়। আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কার্যকর সুরক্ষামূলক সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, প্রশিক্ষণ ও স্বক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব।
মোমেন বলেন, ‘পাশাপাশি অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষত বিদেশে থাকাকালে আমরা কারিগরি সুবিধার ওপর জোর দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে অবশ্যই কারিগরী ও সুসজ্জিত হতে হবে, যাতে করে আমরা বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, সরকার সমন্বিত ড্যাটাবেইজ তৈরির মাধ্যমে তথ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করছে। এছাড়াও প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের সহায়তার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইসিটি-ভিত্তিক তথ্য সেবা চালু করা হয়েছে।
মোমেন বলেন, ‘আসন্ন সম্মেলনে আমরা প্রবাসী শ্রমিকদের এই দিকগুলো তুলে ধরব। আমি এ সমস্যার একটি অর্থবহ ফলাফলের জন্য অন্যান্য আলোচনা ও বৈঠকেও এই ইস্যুটি উত্থাপনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গ্লোবাল কম্প্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন জিসিএম এবং নিউইয়র্ক ডিক্লিয়ারেশন এনওয়াইডিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সুপারিশের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্লাটফরমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
মোমেন বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিকদের বহুমুখী আর্থ-সামাজিক দিক ও বৈদেশিক নীতির আলোকে আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মতো জাতীয় নীতিমালাগুলোতেও অভিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের একটি ঐতিহাসিক সত্যের বিষয়ে মনযোগ আকর্ষণ করছি। আর তা হলো অভিবাসীরা কোন দেশের জন্য বোঝা নয়। তারা একটি দেশের উন্নয়ন সহযোগী।’
বক্তব্যের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন জাতির পিতার জন্ম-শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে।
বাসস/এমআরআই/অনুবাদ-কেএটি/২২২০/এবিএইচ