গৌহাটিতে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে

947

ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ভারতের গৌহাটিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
বিজিবি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা ও আহত করার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানানো হবে। এধরনের কর্মকান্ড বন্ধে করনীয় নিয়ে সম্মেলনের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বিজিবি দিবস-২০২০ উপলক্ষে গত রোববার পিলখানায় সাংবাদিকের বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিজিবি সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ শীর্ষ বৈঠকে এবং গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি-বিএসএফের ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনায় সীমান্ত হত্যা ও মাদক চোরাচালন বন্ধের বিষযটি প্রাধান্য পেয়েছে। ওই বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে উভয় বাহিনীর প্রধান একমত পোষন করেছিলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে এবং বিজিবি’র পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের গৌহাটিতে এবারের সম্মেলনে ভারত হতে বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ, গাঁজা, হেরোইন এবং ভায়াগ্রা অথবা সেনেগ্রাসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্যের চোরাচালান রোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
ভারতের অভ্যন্তরে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্যের কারখানা অথবা গুদাম এবং মাদকের চোরাচালান রোধ, মাদক পাচারকারীদের সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় নিয়েও আলোচনা হবে।
ভারত হতে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান রোধ এবং অস্ত্র চোরাচালান রোধে অস্ত্র বিক্রেতাদের সম্পর্কে তথ্য বিনিময় এবং বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের সীমানা লংঘন বা অবৈধ পারাপার অথবা অনুপ্রবেশ রোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারতের অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ না করা এবং বন্ধ থাকা বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা, উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন এবং রাজশাহী সীমান্তের চর মাজারদিয়া ও চর খানপুর এলাকার স্থানীয় জনসাধারনের চলাচলের সুবিধার্থে পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশ ব্যবহারের অনুমতি নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
এছাড়া ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনের (২২-২৬ ডিসেম্বর ২০২০) আনুষ্ঠানিক বৈঠক আজ বিকেল ৩ টার দিকে ভারতের গৌহাটিতে শুরু হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করছেন। অপরদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ফ্রন্টিয়ার আইজিগণ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করছেন।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর সীমান্ত সম্মেলনের ‘যৌথ আলোচনার দলিল’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে। সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামী ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন।