বার-এট-ল শেষে আমাকে দেশে ফিরে আসতে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু : ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া

587

ঢাকা, ১১ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : দেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার ও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের প্রথম নারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া বলেছেন, দেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে বার-এট-ল ডিগ্রী অর্জন শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসতে বলেছিলেন।
ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লন্ডনে লিংকনস ইন কোর্ট অধ্যয়নরত ছিলেন। সে সময় দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে তিনি সেখানে কাজ করছিলেন। তার সঙ্গে অনেক বাংলাদেশী তখন সক্রিয় ছিলেন। তাদের মধ্যে বিচারপতি আবু সাঈদ চেীধুরী, সুলতান শরীফের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রাবেয়া আরো বলেন, ১৯৭১ সালে লিংকনস ইনে-এ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের পক্ষে লন্ডনে একটি কনফারেন্স তারা ভন্ডুল করে দেন। মুক্তিযুদ্ধের বছর সেখানে তার পরীক্ষা দেয়া হয়নি। পরে ১৯৭৩ সালে তিনি বার-এট-ল ডিগ্রী লাভ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু লন্ডন সফরে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধু ক্ল্যারিজ হোটেলে ওঠেন। আমিও (রাবেয়া) আরো কয়েকজন হোটেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাই। বঙ্গবন্ধুর কক্ষে যাওয়ার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। পরে তার কক্ষে প্রবেশ করি । ওই সময় বঙ্গবন্ধু লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় চেয়ারে বসা ছিলেন। সেখানে আরো লোকজন ছিলো। শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমরা পরিচিত হই এবং কে-কী করছি তাও বলি। বঙ্গবন্ধু আমাদের মুহূর্তেই আপন করে নিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। আমার বার-এট-ল ডিগ্রীর কথা জানার পর বঙ্গবন্ধু খুবই খুশি হলেন। বাংলাদেশের মেয়ে বার-এট-ল ডিগ্রী অর্জন করছে এজন্য তিনি আমাদের নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন।
বঙ্গবন্ধু তখন আমাকে বলেন, ‘আসেন আসেন, দেশে আসেন, সবই হবে।’ বঙ্গবন্ধু তখন বলেন, দেশের সংবিধান হয়েছে, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিমকোর্টকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমি যেন দেশে গিয়ে আইনাঙ্গনে ভূমিকা রাখি। তারপর আর কালবিলম্ব না করে দেশে ফিরে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করি।
রাবেয়া ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার জীবনে এতো সম্মোহনী ক্ষমতার অধিকারী আর কোন নেতা বা পুরুষ দেখিনি। তখন দেখেছি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া এবং জনগণের কল্যাণই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে চলতি বছর ডক্টর অব লজ উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি দেশে প্রথম ও এশিয়ার দ্বিতীয় নারী হিসেবে এ উপাধি পেলেন। এ উপলক্ষে গত ৯ আগস্ট ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন রাজধানীর গুলশানে ওয়েষ্টিন হোটেলে এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী এড. আনিসুল হক, সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিমকোর্ট বার নেতৃবৃন্দসহ বিপূল সংখ্যক আইনজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
রাবেয়া ভূঁইয়া ১৯৭৩ সালে ব্রিটেনের লিংকন ইন কোর্ট থেকে বার-এট-ল ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করনে ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ব্যারিস্টার রাবিয়া ভূঁইয়া ১৯৮৫-৮৭ সাল পর্যন্ত সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, সামাজিক প্রতিবন্ধি পুর্নবাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। আইন শাস্ত্রের ওপর দেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া একাডেমী ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ব্যারিস্টার রাবেয়া বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্যতম আইনজীবী। নারীর ওপর সহিংসতা বৈষম্য রোধে কাজ করছেন তিনি।