বাসস ক্রীড়া-১৫ : প্লে-অফে বরিশাল, বৃথা গেল নাইমের সেঞ্চুরি

327

বাসস ক্রীড়া-১৫
ক্রিকেট-বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি
প্লে-অফে বরিশাল, বৃথা গেল নাইমের সেঞ্চুরি
ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ (বাসস) : বেক্সিমকো ঢাকাকে হারিয়ে শেষ দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপে প্লে-অফে উঠলো তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল। আজ লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ঢাকাকে ২ রানে হারিয়ে প্লে-অফের টিকিট পায় বরিশাল।
এই জয়ে ৮ খেলায় ৩ জয় ও ৫ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে থেকে প্লে-অফ নিশ্চিত করলো বরিশাল। আর ৮ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে থেকে লিগ পর্ব থেকেই আসর শেষ করতে হলো মিনিস্টার রাজশাহীকে। এ ম্যাচ হারলেও, ৮ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে ঢাকা। আর ৮ খেলায় ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে প্লে-অফ খেলবে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। ৮ খেলায় ৮ পয়েন্ট দ্বিতীয় স্থানে থেকে প্লে-অফ খেলবে জেমকন খুলনা।
এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে সাইফ হাসান-আফিফ হোসেন-তৌহিদ হৃদয়ের হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৩ রান করে বরিশাল। জবাবে ওপেনার নাইম শেখের ১০৫ রানের পরও টার্গেট স্পর্শ করতে পারেনি ঢাকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯১ রান করে ঢাকা। দলকে জেতাতে না পারলেও, ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাইম।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে ঢাকা। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালোই ছিলো বরিশালের। ৪৪ বলে ৫৯ রানের সূচনা দলকে উপহার দেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
২টি চারে ১৭ বলে ১৯ রান করা তামিমকে থামিয়ে বরিশাল শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ঢাকার অফ-স্পিনার আল-আমিন। তিন নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি পারভেজ হোসেন ইমন। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ বলে ১৩ রান করেরন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে সাইফের সাথে ২৩ রান যোগ করেন ইমন।
তামিম-ইমন বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলেও এক প্রান্ত আগলে দলের রানের চাকা সচল রাখেন সাইফ। ৪১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামতে হয় তাকে। ঢাকার পেসার রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সাইফ। ৪৩ বলে ৮টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান সাইফ।
১৩ দশমিক ৪ ওভারে দলীয় ১০২ রানে সাইফ বিদায় নেন। এরপর ইনিংসের বাকী ৩৮ বলে ৯১ রান তুলেছেন দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান আফিফ ও হৃদয়। দু’জনই বিধ্বংসী রুপ ধারন করেছিলেন।
১৯ ওভারে দলের স্কোর ১৭৫ রানে নিয়ে যান আফিফ-হৃদয়। তখন আফিফ ২৩ বলে ৪৩ ও হৃদয় ১৮ বলে ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ঢাকার বাঁ-হাতি পেসার শফিকুল ইসলামের করা শেষ ওভার থেকে ১৮ রান তুলেন আফিফ-হৃদয়। ওভারে ২টি চারে ১১ রান নিয়ে ২২তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হৃদয়। ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দেন তিনি।
আর ১টি ছক্কায় ৭ রান নিয়ে ২৫ বলে অর্ধ শতক পূর্ণ করেন আফিফ। শেষ পর্যন্ত ১টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২২ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ঢাকার রুবেল-আল আমিন ও মুক্তার ১টি করে উইকেট নেন।
আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত হওয়ায় ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না ঢাকার কাছে । তবে শীর্ষ দুইয়ে থাকার লক্ষ্য ছিলো ঢাকার। কারন শীর্ষ দুইয়ে থাকতে পারলেই, কোয়ালিফাইয়ারের সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে হারলেও, টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। এমন লক্ষ্যে বরিশালের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৪ রানের টার্গেট দারুন সূচনা ছিলো ঢাকার।
পাওয়ার প্লেতে দলকে ৫২ রান এনে দেন ঢাকার দুই ওপেনার নাইম ও সাব্বির রহমান। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে সাব্বিরকে ১৯ রানে থামিয়ে দেন ঢাকার প্রথম উইকেট তুলে নেন বরিশালের বাঁ-হাতি স্পিনার সোহরাওয়ার্দি শুভ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১ বলে ১৯ রান করেন সাব্বির।
সাব্বিরের পর ঢাকার মিডল-অর্ডারে জোড়া আঘাত হানেন শুভ। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৫ ও আল-আমিন খালি হাতে ফিরেন। এতে ৬২ রানেই ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। এ অবস্থায় জুটি গড়েন নাইম ও ইয়াসির আলি। উইকেট ধরে খেলে ১৪তম ওভারে দলের স্কোর শতরানে নিয়ে যান তারা। ততক্ষনে একবার জীবন পেয়ে ৪৩ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছান নাইম।
১৫তম ওভারে ৩টি ছক্কায় ২২ রান তুলেন নাইম। পরের ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান তুলেন নাইম-ইয়াসির। ১৭ ওভার শেষে নাইমের ব্যক্তিগত রান গিয়ে দাঁড়ায় ৯৬তে। বরিশালের পেসার তাসকিন আহমেদের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে এবারের আসরে তৃতীয় সেঞ্চুরিয়ান হন নাইম। ৬০তম বলে তিন অংকে পা দেন নাইম। এর আগে এবারের আসরে মিনিস্টার রাজশাহীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও ফরচুন বরিশালের পারভেজ হোসেন ইমন সেঞ্চুরি করেছিলেন।
সেঞ্চুরির পর ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে থামেন নাইম। বরিশালের পেসার সুমন খানের বলে ব্যক্তিগত ১০৫ রানে আউট হন নাইম। তার ৬৪ বলের নান্দনিক ইনিংসে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা ছিলো। ইয়াসিরের সাথে চতুর্থ উইকেটে ৫৯ বলে ১১০ রানের জুটি গড়েন নাইম।
নাইম যখন ফিরেন তখন ১০ বলে ২২ রান প্রয়োজন ছিলো ঢাকার। আর শেষ ওভারে সমীকরন দাড়ায় ১৭ রানের। শেষ ওভারটি করার দায়িত্ব পান পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি।
প্রথম বলেই ব্যক্তিগত ৪১ রানে রান আউট হন ইয়াসির। বাই থেকে রান নিতে গিয়ে রান আউট হন তিনি। অবশ্য ওয়াইডের কারনে ১ রানও পায় ঢাকা। ২৮ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন ইয়াসির।
দ্বিতীয় বলে ১ রান দিলেও, তৃতীয় বলে ছক্কা আদায় করেন নেন মুক্তার। চতুর্থ বলে মুক্তারকে থামান রাব্বি। পরের দু’বলে কোন রান দেননি রাব্বি। সেখানেই ম্যাচ হেরে যায় ঢাকা। কারন শেষ বলে জিততে ৯ রান দরকার পড়ে ঢাকার। শেষ বলে ছক্কা মেরেও দলের হার এড়াতে পারেননি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলি। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯১ রান করে ঢাকা। বরিশালের শুভ ৩ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ফরচুন বরিশাল : ১৯৩/৩, ২০ ওভার (হৃদয় ৫১*, আফিফ ৫০*, সাইফ ৫০*, আল-আমিন ১/৫)।
বেক্সিমকো ঢাকা : ১৯১/৬, ২০ ওভার (নাইম ১০৫, ইয়াসির ৪১, শুভ ৩/১৩)।
ফল : ফরচুন বরিশাল ২ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ নাইম (বেক্সিমকো ঢাকা)।
বাসস/এএমটি/২১৫৫/স্বব