বাজিস-১ : কেরানীগঞ্জে চলছে কোরবানীর পশু মোটা-তাজাকরণ প্রক্রিয়া

357

বাজিস-১
কেরানীগঞ্জ-কোরবানীর পশু
কেরানীগঞ্জে চলছে কোরবানীর পশু মোটা-তাজাকরণ প্রক্রিয়া
॥ মো. মোস্তফা কামাল ॥
কেরানীগঞ্জ, ১১ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়ায়-মহল্লায় চলছে কোরবানীর পশু মোটা-তাজাকরণ প্রক্রিয়া। কেউবা শখের বসে । কেউবা আবার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষছেন এসব পশু। কেউ পোষছেন নিজেরা কোরবানী দেয়ার জন্যও । এসব পশু পালকদের গোয়ালে দেশীয় গরুর পাশা পাশি রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের গরু। এসব পশু পালকদের মধ্যে পেশাদার গরু-ছাগল ব্যবসায়ীরা কোরবানীর ৭-৮মাস আগেই পছন্দের পশু ক্রয়করে যতেœর সাথে লালন পালন করে থাকেন। স্থানীয় এসব পশু পালকদের বেশীরভাগ কোরবানীর পশুই নিজ নিজ গোয়াল থেকেই বিক্রি হয়। এছাড়া কেরাণীগঞ্জের অভ্যন্তরীণ পশুর হাট এবং রাজধানীর নয়াবাজার,শ্যামপুর ও জুরাইনসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে স্থানীয় অনেকেই আগেভাগে তাদের পছন্দসই গরু কেনার পর ওই গোয়ালেই রেখে দেয় কোরবাণীর আগ পর্যন্ত। এজন্য তারা অবশ্য পশুর খাবার খরচ ও রাখালের জন্যও কিছু খরচ বহন করে থাকে । যারা সাধারণত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশু পালন করে তাদের প্রত্যেকেই ৪০ থেকে ৫০টি গরু পালন করে। এর বাইরেও তাদের অনেকেরই রয়েছে সারা বছরজুড়ে ডেইরী ফার্মের ব্যবসা। তাছাড়া কোরবানীর পশু পালন একদিকে যেমন পরিশ্রমের কাজ অপরদিকে এ ব্যবসা অনেক ব্যয়বহুল বলেও জানান স্থানীয় পশুপালকরা। মোটামুটি একটু ভালো ও বড় সাইজের এক একটি ভারতীয়-বার্মা কিংবা নেপালী গরুর দাম এক থেকে দুই লাখ টাকায় কিনতেই হয়। তারপর এদের লালন পালন খরচ মিটিয়ে পরে ব্যবসা।
কেরাণীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, কেরাণীগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৩০জন পশুর খামারী রয়েছে। এসব খামারে ৩হাজার ৪শ ৯৫টি ষাড়। ৭শ ৪৬টি বলদ। ৯শ ৬৫টি গাভী ও ১১০টি মহিষসহ মোট ৫হাজার ৩শ ১৬টি গরু মহিষ রয়েছে। এছাড়া ৬শ ৫টি বিভিন্ন জাতের ছাগল ও ২শ উনাশিটি ভেড়া রয়েছে। এসকল খামারীদের পশুর স্বাস্থ্য তদারকির জন্য উপজেলা পশুসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ৩জন ভেটারীনারী ফিল্ড অফিসার সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.জহির উদ্দিন। তিনি আরো বলেন এখানকার খামার মালিকরা সচেতন। তারা গরু মোটা-তাজা করনের জন্য প্রাকৃতিক পদ্ধতি ছাড়া কোন ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করেন না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এখানকার গরুখামারীদের মধ্যে রয়েছে আনোয়ার সিটি এগ্রোভেট,শরীফ এগ্রোভেট, আলম ডেইরী ফার্ম, সামায়রা এগ্রোভেট,শাহজালাল ডেইরী ফার্ম, আনোয়ার হোসেন, আলী আহম্মেদ ডেইরীর নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও উপজেলার জিনজিরা,শুভাঢ্যা, রাজেন্দ্রপুর, আব্দুল্লাহপুর,দড়িগাও,খোলামোড়া, নরুন্ডী,শাক্তা, আটি,কলাতিয়া,তারানগর ও হযরতপুর ইউনিয়নের অনেকেই কোরবানীর পশু পালন করে নিজেরা কোরবানী দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিক্রিকরে থাকেন। এসকল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়,তারা কৃতিম উপায়ে গরু-ছাগল মোটাতাজা না করে ভালো খাবার ও যতেœর সাথে লালন পালন করে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের পশুকে বেশি দামে বিক্রয়ের জন্য লোভনীয় করে তোলেন।
আনোয়ার সিটি এগ্রোভেটের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এবছর তার ফার্মে প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও মহিষ রয়েছে। তবে তা বিগত সব বছরের তুলনায় অনেক কম। গরু মোটা-তাজা করন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পালিত পশুকে খৈল-ভূষি,কুড়া-কচুরিপানা ও প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়াই। এর বাইরে কোন রকম প্রযুক্তির আশ্রয় নেই না। আনোয়ার হোসেন আরো বলেন আমার উদ্দেশ্য কেবল ব্যবসায়ীক নয়। কেরানীগঞ্জবাসী যাতে ভালো মানের পশু কোরবানীর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত নির্ভেজাল কোরবানীর মাংস খেতে পারে। তিনি বলেন, ইনজেকশন,ট্যাবলয়েট কিংবা বৈজ্ঞানিক আবিস্কৃত সব খাবারের মাধ্যমে পশু খুব তাড়াতাড়ি মোটা-তাজা হলেও এতে পশুর জীবনের জন্যও যেমন ঝুঁকি তেমনি এসকল পশুর মাংস খাওয়া আমাদের জীবনের জন্যও ঝুকি। কোরবানীর পশুর হাট থেকে এধরনের পশু কিনে অনেকেই প্রতারনার শিকার হয়ে থাকেন। অনেক আশা-আকাঙ্খার পশুটি বাজার থেকে ৫/৭ দিন আগে কিনে আনার পর দেখাযায় তাকে আর বাচিয়ে রাখা যায় না। গত কয়েক বছরে জিনজিরা ও তার আশপাশের এলাকার অনেকেই এধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
জিনজিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ওয়ারিশ উদ্দিন এবছর বিভিন্ন দেশের নানান প্রজাতির বেশ কয়েকটি গরু সঠিক ভাবে লালন-পালনের মাধ্যমে সঠিক পরিচর্যায় কোরবানীর উপযোগী করে তুলছেন। এর থেকে তিনি নিজে কোরবানী দেয়ার জন্য পছন্দসই দুটি গরু রেখে বাকিসব বিক্রির করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমরা কোন কৃতিমতার আশ্রয় না নিয়ে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পশুকে মোটা তাজা করে তুলি। আমরা আমাদের পালিত পশুকে খৈল-ভূষি,কুড়া-কচুরিপানা ও প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়াই। এর বাইরে কোন রকম প্রযুক্তির আশ্রয় নেই না। কথাহয় রাজেন্দ্রপুর বাঘৈর আলিয়া পাড়া এলাকার পশু ব্যবসায়ী মোঃ শাহজানের ছেলে নুরুল ইসলামের সাথে। তাদের রয়েছে সারা বছরের ডেইরী ফার্মের ব্যবসা। পাশাপাশি তারা প্রতি বছরই কোরবানীর জন্য পশু পালন করে থাকেন। এবছরও তারা কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রজাতির ৩৭টি গরু পালন করছেন। যার প্রতিটির ক্রয়কৃত দামই পড়েছে এক থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে। পরিচিতজনরাই বেশি কিনে থাকে বিধায় আমরা কোন রকম ইনজেকশন কিংবা ট্যাবলয়েট বা এধরনের অন্য কোন অবৈধ খাবারের মাধ্যমে পশু মোটা-তাজা করনের আশ্রয় নেই না। তবে অনেকেই এধরনের পদ্ধতির মাধ্যমে কোরবানীর পশু মোটা-তাজা করে থাকে বলে তিনি শুনেছেন বলে জানান। কোরবানীর বাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আব্দুল্লাহ পুরের দড়িগাও এলাকার সাহেদ পোষছেন ৪০টি গরু। একই এলাকার জামালসহ খোলামোড়া,শাক্তা, কলাতিয়া .তারানগর ও হযরতপুরের অনেকেই পালন করছেন কোরবানীর পশু। যে পশু গুলো হযরতপুর,কলাতিয়া, খাড়াকান্দি,দড়িগাও,আটি ও জিনজিরা- আগানগর পশুর হাটে বিক্রয় করা হবে বলে জানিয়েছে পশু পালকরা ।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১০২৬/নূসী