বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

689

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধিতাকারী ও ভাঙচুরকারীদের পাশাপাশি এসবের উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সেইসঙ্গে ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এবং এসব বিষয়ে জনমনের বিভ্রান্তি দূর করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবকে তাদের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্য রক্ষায় নিরাপত্তা চেয়ে আনা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
রিটের পক্ষে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরসহ অসম্মান প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধানের ৭(ক) অনুসারে রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ প্রচলিত অন্যান্য আইনে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবসহ বিবাদীদের (রেসপনডেন্ট) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও, সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভাঙচুরকারী ও উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব, পুলিশের আইজি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এ ব্যাপারে গতকাল প্রকাশিত বাসসের প্রতিবেদনে অনবধানতাবসত রিটের প্রধান আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথীর নামটি যথাস্থানে উল্লেখ করা হয়নি। প্রধান আইনজীবী হিসেবে তার নামটি প্রথমেই উল্লেখ করা উচিত ছিল।
গত শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্য পরিষদে’র ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়। একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং বুড়িগঙ্গায় ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে। একই দিন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম একটি অনুষ্ঠানে মামুনুল হকের সুরেই কথা বলেন।
ধর্ম ভিত্তিক কয়েকটি দল ও সংগঠন ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও বিরোধিতা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ভাঙচুর করা হয়।
এই প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে ৬ ডিসেম্বর রোববার হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী উত্তম লাহিড়ী।