বদু মিয়ার উৎপন্ন বিদেশী ফলের ব্যাপক চাহিদা

241

হবিগঞ্জ, ১০ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : জেলার মাধবপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত কৃষক বদু মিয়ার উৎপন্ন বিদেশী ফলের এখন ব্যাপক চাহিদা। হবিগঞ্জ শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নিমলায় জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে চলমান বৃক্ষ এবং ফলদ বৃক্ষ মেলায় লোকজন লাইন দিয়ে বদু মিয়ার কাছ থেকে ফল কিনছে।
মেলায় গিয়ে দেখা যায় মেলার সামনে একটি টেবিলে সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন রং বেরংয়ের ফল। এর মাঝে আছে সামমাম, রড মিলন, এ্যাকশন ফল এবং সুইট ব্ল্যাক-২ তরমুজ। টেবিলের বাইরে কয়েকটি বস্তায় ভর্তি আছে আরও অনেক ফল। সেখানে একটি সুইট ব্ল্যাক-২ তরমুজ কিনে ছুরি দিয়ে কেটে খাচ্ছিলেন সরকারী বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব এবং প্রভাষক আ ব ম ফখরুদ্দিন পারভেজ। তারা এই তরমুজের স্বাদ আস্বাদন করে তৃপ্ত হয়ে বাসার জন্য কিনে নেন আরও কিছু ফল।
সামমাম, রডমিলন, এ্যাকশন ফল বিক্রি হচ্ছিল ১৫০টাকা কেজি হিসাবে। আর সুইট ব্ল্যাক-২ তরমুজ ৫০ টাকা কেজি।
সরকারী বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, কৃষক বদু মিয়া যে সকল ফল আবাদ করছেন সেগুলো থাইল্যান্ডসহ বিদেশী ফল। এগুলো বেশ সু-স্বাদু। তবে এগুলোর আবাদ অনেক কষ্টকর । বদু মিয়ার এই দেখানো পথে এখন অনেকেই চেষ্টা করবেন এই ফল আবাদ করতে। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবেন বেশী।
এ্যাকশন ফল সম্পর্কে তিনি বলেন, এটার সরবত খুব উপকারী। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনির পাথর দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে।
আরেক ক্রেতা সরকারী বৃন্দাবন কলেজের ছাত্রী তানিয়া বেগম জানান, তিনি দুটি সামমাম ফল কিনেছেন। কোনদিন এই ফল দেখেননি। দেখতে ভাল লেগেছে বলে তিনি এই ফল কিনে নিয়েছেন।
কৃষক বদু মিয়া জানান, মেলায় প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফল তিনি বিক্রি করতে পারছেন। অনেকেই এসে তাকে ফলের নাম জিজ্ঞেস করে। তিনি এগুলোর বর্ণনা দেন। অনেকে এসে এই ফল আবাদের জন্য পরামর্শ চাইলে তিনি তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। তিনি জানান কেউ যদি ফোন করে তার খামারের ফল কিনতে চায় তবে তিনি তা সরবরাহ করেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার ফলের চাহিদা রয়েছে।
বদু মিয়া এলাকার একজন আদর্শ চাষী হিসেবে পরিচিত। তার খামারে বিদেশী ফলসহ বারমাসী তরমুজ উৎপাদিত হচ্ছে। সারা বছরই তিন প্রকার তরমুজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করেন বদু মিয়া। হাইব্রিড জাতীয় মাল্টা আলু চাষ করে কয়েক বছর আগে কৃষকদের মধ্যে আলোচনায় আসেন বদু। কৃষক বদু মিয়া জানান, তিনি চীন এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ফল ও তরমুজ আবাদ করেন তার খামারে। চলতি বছর বদু মিয়া তিন বিঘা জমিতে উন্নতমানের তরমুজ চাষ করেছেন। তানিয়া মনিয়া, ব্ল্যাকবেরি, সামমামÑ এই তিন জাতের তরমুজে বদু মিয়ার ক্ষেত এখন ভরে গেছে। মেলায় আসার উদ্দেশ্য হল তার এই ফলের প্রচারণা করা।
কৃষক বদু মিয়া প্রতি বছর নতুন কিছু চাষাবাদ করে এলাকার কৃষকদের মধ্যে আলোচনায় আসেন। গত কয়েক বছরে তিনি চীন, থাইল্যান্ড,ভারত থেকে আমদানীকৃত নতুন জাতের বিভিন্ন সুস্বাদু বারমাসি তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। তার খামারে সবজি উৎপাদনে কোন রকম রাসায়নিক সার ও বিষ প্রয়োগ করা হয় না। জৈব সার ও জৈব বালাই নাশক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। ফলে তার উৎপাদিত ফল স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি তার। তার খামার পরিদর্শন করেছেন কৃষি সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তিনিও পেয়েছেন সেরা কৃষকের পুরস্কার।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের হযরত শাহ সুফি হাজী আব্দুল হামিদ মুন্সির ছেলে আব্দুল বাছির বদু মিয়া। বেশি দূর পড়ালেখা হয়নি বদু মিয়ার। ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন তিনি। যখন সংসারের দায়িত্ব পরে তখন বদু মিয়া নেমে পড়েন কৃষি কাজে। প্রথমে পারিবারিক এক একর পতিত জমিতে শুরু করেন ধান চাষ। এক সময় ধান চাষের পাশাপাশি শুরু করেন সবজি চাষ। কঠোর পরিশ্রম সাফল্য এনে দেয় বদু মিয়াকে। তিনি এখন মাধবপুর উপজেলার কৃষকদের কাছে রোল মডেল। কৃষি কাজ করেই চলে তার সংসার। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল হক জানান, বদু মিয়া এ উপজেলার কৃষকদের মডেল। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এখন কৃষি কাজ করে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।