ওআইসি’র সিএফএম-এ রোহিঙ্গা, ইসলামোফোবিয়া ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ

711

॥ নাইজার থেকে তানজিম আনোয়ার ॥
নিয়ামেই (নাইজার), ২৯ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় আইনী লড়াইয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ, ইসলামোফোবিয়া ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম রাষ্ট্রদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে আরব রাষ্ট্রসমূহের নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ৫৭ রাষ্ট্রবিশিষ্ট ওআইসি’র পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠক শেষ হয়েছে।
ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওতাইমিন কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার (সিএফএম)’র এর ৪৭তম বৈঠক শেষে শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি নয়, ঐক্য ও সংহতির উপর জোর দিয়েছি। আমরা একে অপরকে সম্মানের পথে চলার চেষ্টা করছি। বাক স্বাধীনতার মানে আপনি ধর্ম সম্পর্কে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারেন না।’ পরস্পরের মতামতের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ইসলামের অংশ নয়, অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতি নিয়ে ইসলামের কোন সমস্যা নেই। ইসলাম নারী ক্ষমতায়নকে সম্মান করে ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘যদি কোন খারাপ মানুষ ইসলামের নামে অনৈতিক কাজ করে, তবে তারা ইসলামকে নয়, কেবলমাত্র নিজেদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের এই খারাপ কাজের দায় ইসলামের নয়।’ এ সময় ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামোফোবিয়া’র (ইসলাম আতঙ্ক) সাম্প্রতিক উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে দায়ের করা রোহিঙ্গা গণহত্য মামলায় আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে গাম্বিয়াকে ইতোমধ্যেই আর্থিক সহায়তায় দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান।
ওআইসি ইতোমধ্যেই আইসিজে-তে দায়ের করা মামলায় গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহে একটি বিশেষ এ্যাকাউন্ট (হিসেব) খুলেছে। সংস্থাটি আরো তহবিল প্রদানের জন্য এর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ওআইসি-কে ৫ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করেছে বলে সিএমএফ-এ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। ওআইসি-কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারি বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে তার ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সীমিত সামর্থ সত্ত্বেও গাম্বিয়ার সহায়তায় ওআইসিকে ইতোমধ্যে ৫ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ওআইসি মহাসচিব বলেন, সিএফএম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব ও আরব দেশসমূহের পদক্ষেপের নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে ফিলিস্তিন সংকটের দ্রুত সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ মহাসচিব বলেন, ওআইসি ফিলিস্তিন সংকটের যে কোন শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
বিগত ৭২ বছর ধরে এই সংকট চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এ সময় তিনি ওআইসি’র নব নির্বাচিত মহাসচিবকে অভিনন্দন জানান এবং ইসলামিক বিশ্ব ও এর জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে তার সাফল্য কামনা করেন।
সিএফএম চলাকালে চাদের রাষ্ট্রদূত হুসেইন ইবরাহীম তাহাকে ওআইসি’র নতুন মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদে এই দায়িত্ব পালন করবেন।
সিএফএম এর সমাপনি অধিবেশনের আগে নতুন মহাসচিব হিসেবে হুসেইন ইবরাহীম তাহার নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ নিজভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। এদের অধিকাংশই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমনপীড়ন শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশটির কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে, গাম্বিয়া আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করে। ওআইসি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস গাম্বিয়াকে সমর্থন দেয়।
গত বছর ১০-১২ ডিসেম্বর আসিজে-তে মামলাটির প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ডিসেম্বরের শুনানিতে গাম্বিয়া মামলার আর্জিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের আলোকে অভিযোগ এনে বলে, ভয়াবহ সামরিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ‘মিয়ানমার তাদের নিজ দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছে।’
গত ২৩ জানুয়ারিতে আইসিজে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন করে গণহত্যার মতো ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ঐতিহাসিক রায় রায়।