শিশুর বিকাশে মায়ের দুধের বিকল্প নেই

919

ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : শিশুর পুষ্টি, জীবন ধারণ এবং শারিরীক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত শিশু খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক মানব দেহ থেকে সন্তানের জন্য শুধুমাত্র একটি খাদ্য আহরণের ব্যবস্থা রেখেছেন, আর সেটি হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ।
শিশুর সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বেঁচে থাকার জন্য তিনটি নির্ধারক আছে। এগুলো হলো : নিরাপত্তা, যতœ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ। এই তিনটির সমন্বয়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণই হলো মায়ের বুকের দুধ।
মানব সন্তান পৃথিবীতে আসার সাথে-সাথেই আল্লাহ তাআলার রহমতে প্রতিটি মায়ের বুকে তার অনাগত সন্তানের জন্য খাদ্য প্রস্তুত হতে থাকে। জন্মের সাথে-সাথে শিশুকে বুকে দিলেই শিশু তার ক্ষুধা, তৃষ্ণা মিটানোর সুধা পেয়ে যায়। এই শালদুধ যে শুধু শিশুর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটায় তা নয়, শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে। যে কারণে শালদুধকে বলা হয় জীবনের প্রথম টিকা। শৈশবে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার ফলে পরবর্তী জীবনে সেই শিশু বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকে। শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করলে শিশুরা পায় সঠিক পুষ্টি, পায় সুস্থ বাড়ন আর মগজের বিকাশের জন্য সব ধরনের পুষ্টি উপকরণ। শিশুরা পায় শ্রেষ্ঠ সুরক্ষা। শ্বাসনালি সংক্রমণ, ডায়রিয়া ও অন্যান্য জীবনঘাতী রোগ থেকে রক্ষা পায়। শিশুরা সুরক্ষা পায় স্থ’ূলতা থেকে, অসংক্রামক রোগ যেমন : হাঁপানি ও ডায়াবেটিস থেকেও পায় সুরক্ষা। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য প্রতিষেধক। এছাড়া খাদ্য উপাদানে শিশুর বুদ্ধিদীপ্ততা ও চোখের তীক্ষèতা বাড়ায়। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে ওই মায়ের অল্প সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ ঝুঁকি কম থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে। কারণ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, কান পাকা, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগ থেকে মায়ের দুধ শিশুকে সুরক্ষা করে। বুকের দুধ পান করানোর মাধ্যমে শুধু শিশুই নয় বরং একজন মা নিজেও উপকৃত হতে পারেন।
আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে মিডিয়ার মাধ্যমে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ওপর ব্যাপক প্রচারণার ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৫ বছরে ৬ মাস বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, জন্ম থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত পৃথিবীর সকল শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে বছরে ১৫ লাখেরও বেশী শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মায়ের দুধ ও সম্পুরক খাদ্যের বিষয়ে জোর প্রচারণায় নামতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে মায়ের দুধে ২০০টি পুষ্টি উপদান রয়েছে। পৃথিবীর আর কোন একক খাদ্যে এতো পুষ্টি নেই। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া শুরু করলে অন্তত ৩৭ হাজার নবজাতকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। অন্যদিকে গুড়ো দুধ বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য শিশু মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
মা ও শিশুর অপুষ্টি, সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। আমাদের উচিৎ সব মাকে এই মর্মে সচেতন করা যে, একজন মা একটু ধৈর্য সহকারে চেষ্টা করলেই তার সন্তানকে সফলভাবে বুকের দুধ পান করাতে সক্ষম।
পবিত্র কোরআনে নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে -’যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করতে চায়, তাঁর জন্য জননীরা তাঁদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুগ্ধপান করাবেন। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাঁদের ভরণপোষণ করা’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত-২৩৩)।