বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

292

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-ফ্রিল্যান্সার আইডি-ভাষণ
৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিটি জেলায় সরকার ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে দক্ষ কর্মক্ষম লোক সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামীর বাংলাদেশ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন এবং অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে দেশে দারিদ্রের হার হ্রাস পাচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক দূর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিই পারবে আমাদের দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে।
তিনি বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই সরকারের বিভিন্ন চলমান মেগাপ্রকল্প যেগুলো করোনাভাইরাসের কারণে সাময়িক বন্ধ ছিল আবারো চালু করা সম্ভব হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শেখ হাসিনা বলেন,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে আমাদের যে মানবসম্পদ তৈরী হচ্ছে তাতে করে দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। আর ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন এক ধরনের উদ্যোগ যার মাধ্যমে ঘরে বসেও অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।’
তিনি বলেন,শারিরীক প্রতিবন্ধীরাও ফ্রিল্যান্সিয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে যেমন অর্থ উপার্জন করতে পারবে তেমনি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখারও সরাসরি সুযোগ পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন,‘আমরা প্রতিবন্ধীদেরও ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগাতে চাই, যাতে তাঁরা সমাজে অবহেলিত না হন।’
তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন অফিস আদালতে যেতে না হলেও এর মাধ্যমে যেহেতু নিয়মিত অর্থ উপার্জন করা যায় সেহেতু এটাও একটা কাজ, এটাও একটা চাকরী। এটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস। নিজে শুধু বস নয়, আরো অনেকেরও কাজের সুযোগ করে দেয়া, যে কারণে এর স্বীকৃতি দরকার ছিল।
তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সচিব ওয়াজেদের পরামর্শে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ থেকে আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার সহ তাঁর সরকারের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার পদক্ষেপ সমূহ ও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ’৭৫ পরবর্তী দু:শাসন এবং সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে প্রতিরাতে দেশে কারফিউ বলবৎ রাখার কঠোর সমালোচনা করে একে ‘কারফিউ গণতন্ত্র’ বলেও আখ্যায়িত করেন এবং জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃত করার নিন্দা জানান।
’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে অবশেষে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে ১৯৮১ সালে একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসার প্রসংগ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন,‘আমি একরকম জোর করেই বাংলাদেশে ফিরে আসি একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে- যে দেশের মানুষের জন্য আমার বাবা তাঁর সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, আমার মা করেছেন এবং যে দেশের মানুষ তখনও ক্ষুদার্ত। আমি এসেছিলাম সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাঁদের একটা সুন্দর জীবন উপহার দেব বলে।’
শেখ হাসিনা ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয় পত্র প্রদানের উদ্যোগ নেয়ায় সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এবং তাঁর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সজিব ওয়াজেদ জয়কে শুরু থেকেই বলে এসেছি এটা করতে হবে, তুমি উদ্যোগ নাও। আমাদের এই ছেলে-মেয়েদের একটা স্বীকৃতি দেয়া একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, আজকে ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সকল ফ্রিল্যান্সাররা রেজিস্ট্রৈশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা সামাজিক পরিচিতির পাশপাশি ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে, আর চাকরী খুঁজতে হবেনা, নিজেরা কাজের পাশপাশি অন্যকেও কাজ দিতে পারবে।
ঘৃহিণীরা ঘরে বসে এর মাধ্যমে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জণের সুযোগ পাওয়ায় নারীর আরো ক্ষমতায়ন ঘটবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শিখে কেবল ঘরে বসে গিন্নীগিরি করা নয়, তাঁরাও কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে। ঘরে বসে কাজ করতে পারায় ছেলে-মেয়েরা যেমন মাকে কাছে পাবে, তেমনি কিছু অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সে নিজের পরিবারে ভ’মিকা রাখতে পারবে।কাজেই ছেলে-মেয়ে সকলের জন্যই এখানে একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।’
বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন সেটা রেমিট্যান্স আকারে বাংলাদেশে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন ফ্রিল্যান্সারা কাজ করায় রেমিট্যান্সও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ধন্যবাদ জানান এবং আজকের পর থেকে আরো অনেক তরুণ-তরুনী এই ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে আসার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কার্যকর ভ’মিকা রাখবেন বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যত বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো, তত বেশিই দেশের যুব সমাজ লাভবান হবে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/২৩৪০/এবিএইচ