চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতায় উপনীত বাংলাদেশ : মোস্তাফা জব্বার

507

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, এশিয়ার অধিকাংশ দেশ তিনটি শিল্প শিল্প বিপ্লবে শরিক হতে পারেনি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কোন অবস্থাতেই হাতছাড়া করা যাবে না। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নিয়ে এ অঞ্চলের দেশসমূহকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল এই বিপ্লবে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। চতুর্থ এই শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতায় উপনীত হয়েছে বাংলাদেশ।
আজ রাজধানীর হোটেল রেডিসনে তিন দিনব্যাপী এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি’র (এপিটি) পলিসি এন্ড রেগেুলেটরি ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোস্তফা জব্বার এসব কথা বলেন। সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৬টি দেশের ১৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেয়।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের আইটিইউ এর সদস্যপদ লাভ এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে বৈশ্বিক কানেকটিভিটির মাধ্যমে প্রথম ডিজিটাল যুগের যাত্রার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তিনি আগস্ট মাস বাঙালি জাতির শোকের মাস উল্লেখ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে ঘাতকের বুলেটে নিহত বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন।
মোস্তফা জব্বার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ায় আজকের প্রযুক্তির সাথে আগামীর এবং অতীতের সাথে ভবিষ্যতের কোন মিল নেই। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির অভাবনীয় পরিবর্তন ও বিকাশ ঘটছে।
তিনি বলেন, কৃষি সভ্যতায় পৌঁছাতে হাজার বছর সময় লেগেছে, দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের পৌঁছাতে সময় লেগেছে এক’শ বছর এবং তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে পৌঁছাতে এক’শ বছর লেগেছে।
মোস্তফা জব্বার তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র তিন মেয়াদে ১৫ বছরের শাসনামলের অবদান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে দেশের উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছিল। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতির রূপান্তরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে মোবাইল ফোনের মনোপলির ব্যবসা ভেঙ্গে দিয়ে মোবাইল ফোন সাধারণের নাগালে আনা হয়। ২০১৮ সালে দেশে ৪ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয়, যা বিগত সাড়ে ৯ বছরে প্রায় ৪ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ কোটি ৫০ লাখে উপনীত হয়েছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রথম সরকার প্রধান যিনি ২০০৮ সালে জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। উন্নয়নে বিশে^ বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ডিজিটাল শিল্পবিপ্লবের উপযোগী প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য ডিজিটাল জীবনযাত্রা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির সুফল দেশের মানুষ আজ ভোগ করেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিরুপ প্রভাবও রয়েছে। এসব বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। গত ৯ বছরে এ লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে সম্পৃক্ত সকল প্রকার নীতিমালা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সহসাই সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার কেবল প্রযুক্তির বিকাশেই নয় নাগরিক ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করছে। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক ভার্সন ৫জি প্রযুক্তি বিশ্বকে পাল্টে দেবে। তিনি বলেন, আধুনিক এই প্রযুক্তির বিকাশে বিদ্যমান সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে নীতি প্রণেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন জাতি এককভাবে এগোতে পারেন না, সম্মিলিতভাবে আগামী দিনের প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন (আইটিইউ) এশিয়া প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক আইওনি করইভউকী, এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি’র সেক্রেটারি আরউইন হাওরাঙফি এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো: জহিরুল হক অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।