একনেক বৈঠকে ১০ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়সম্বলিত ৭টি প্রকল্প অনুমোদন

1030

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর এবং রিজিওনাল এনহেন্সমেন্ট প্রোগ্রাম (উইকেয়ার) ফেজ ১ এর অধীনে ৪,১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন ৭) উন্নয়ন প্রকল্পে উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনের ৪৮.৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়নসহ দুটি পৃথক প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
বৈঠকে ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়সম্বলিত মোট সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৫টি নতুন এবং ২ টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
একনেক সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে চলতি অর্থ বছরের (অর্থবছর ২০২১) ১৬ তম সভায় আজ এই অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ পৃথকভাবে শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “ সভায় মোট ৭ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সার্বিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৬ হাজার ৪৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা আসবে সরকারের তহবিল থেকে এবং ৪ হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ আসবে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে। ”
ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্টটেকচার বিভাগের পরিকল্পনা কমিশন সদস্য মামুন আল রশিদ বলেন, ভোমরা স্থল বন্দর ও মংলা সমুদ্র বন্দর, সার্ক হাইওয়ে করিডোর,বিমসটেক রোড কড়িডোর এবং এসএএসইসি রোড করিডোর সহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের লক্ষ্যে এ পরিকল্পনাগুলো নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেধে দেয়া ২ বছরের সময়সীমা অনুযায়ি সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সংশোধিত মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। এতে মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং বাকি ১ হাজার ৪৮২ কোটি ৪ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পের মূল কাজের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫১.০০৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহন, ৪৮.৫০ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মান, ৬৩.৪২ লাখ কিউবিক মাটি ভরাট, ১,৬৪৭.২৯ মিটার একটি ফ্লাইওভার নির্মান, ১৯৮.১২ মিটার দৈর্ঘেও ৪ টি ব্রিজ, ৫৫টি কালভার্ট, পথচারিদের জন্য ১২টি ওভারব্রিজ এবং একটি আন্ডারপাস নির্মান।
একনেক বৈঠকে উইকেয়ার ফেজ ১ এর আওতায় রুরাল কানেকটিভিটি,মার্কেট এবং সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (আরসিএমএলঅআই আইপি) ২,১৮০.৯৮ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋৃণ সহায়তা আসবে ১,৫৩৭.৩০ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ২০২৫ সালের জুন নাগাদ যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার ১৮টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
প্রধান প্রকল্প কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৬১১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ১২০ টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন এবং ৪ জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষিপণ্য সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীন ৬১১ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ।

আজকের একনেক বৈঠকে ১৪ বছরের অধিক বয়সের দেশের সকল নাগরিকের স্মার্ট ন্যাশনাল আইডেন্টিটি (এনআইডি) কার্ড সরবরাহে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) ফেজ ২ বাস্তবায়ন অনুমোদন করেছে।
প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশন সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ২০২৫ সালের নভেম্বর নাগাদ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, চলমান আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হবে, এ জন্য এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
আজাদ বলেন, এই নতুন প্রকল্পের অধীনে ১৪ বছরের অধিক বয়সের সকল নাগরিককে স্মার্ট এনআইডি কার্ড সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন যে সব দেশে সবচেয়ে বেশী প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন এমন ৪০ টি দেশে বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকাভুক্তকরণ এবং এনআইডি কার্ড সরবরাহের জন্য টিম পাঠাবে।
প্রকল্পের প্রধান কাজ হবে স্মার্ট কার্ড তৈরি এবং ব্যক্তিগতকরণ। তিনি বলেন, বিদ্যমান প্রকল্পের সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি নতুন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে, এতে প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখযোগ পরিমাণ হ্রাস পাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জানান, এনআইডি পরিসেবাগুলো প্রকল্পের আওতায় না রেখে রাজস্ব বাজেটের আওতায় নিয়ে আসতে তারা বৈঠকে একটি সুপারিশ রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, এনআইডি নিবন্ধকরণ, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধকরণসহ সকল নিবন্ধন কার্যক্রম পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে একক এনটিটিতে নিয়ে আসা যায় কিনা সরকার বিবেচনা করে দেখছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েব যথাযথভাবে মোকাবেলায় কিছু ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যখন ভ্যাকসিন আমদানি এবং সহজলভ্য হবে তখন ভ্যাকসিন যথাযথভাবে প্রয়োগ এবং এর কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য টিকাদানকারীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নের বিলম্বের প্রসঙ্গে আসাদুল বলেন,প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগগুলোকে নির্মাণ সংস্থা এবং ঠিকাদারদের কাজের বিবরণ, কাজের পরিমাণ এবং কোন সংস্থা নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করে এবং কারা করে না , সে সম্পর্কে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন নির্মাণ সংস্থা এবং ঠিকাদারদের উত্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সুস্থ্য প্রতিযোগিতায় উৎসাহিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আসাদুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সড়ক ও মহাসড়ক টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য পুনরায় নির্দেশ দিয়ে সড়ক ও মহাসড়ক থেকে বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন।নির্মাণকালে সড়ক ও মহাসড়কের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে বলেছেন যাতে চালক, হেলপার এবং গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের যাত্রীগণ ভ্রমণকালে বিশ্রাম নিতে পারেন।
পশুপালনে পুষ্টি যোগাতে উন্নতমানের ঘাসের আবাদ বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত প্রযুক্তি হস্তান্তরে ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পকে একটি “ভালো প্রকল্প” বলে উল্লেখ করে বলেছেন,উঁচু মানের ঘাস পশুপালনের জন্য কার্যকর হবে।
১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকায় “খুরুসকুল বিশেষ আশ্রয়ন প্রকল্প” বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে এমন ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন,যাতে প্রকল্পের মূল সুবিধাভোগী ছাড়া বহিরাগত কেউ প্রকল্প এলাকায় স্থান না পায়।
এ ছাড়াও পায়রা বন্দর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ২য় সংশোধিত প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় ১ হাজার ২৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী ফেজ ১ এ অতিরিক্ত ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।