নারায়ণগঞ্জে নতুন আটত্রিশটি স্কুলভবন : প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিগন্ত

745

॥ শরীফ উদ্দিন সবুজ॥
নারায়ণগঞ্জ, ৮ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : সাদিয়া আর হাফিজ। দু’জনেই সেহাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। গতবছর তারা যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো তখন তাদের ক্লাস হতো স্কুলের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে। প্রায়ই সে ভবনের আস্তর খসে পড়তো। কখনো সে আস্তরের টুকরো হতো বেশ বড়। কারো মাথায় পড়ে আহত হয়ে যায় কিনা এ আতঙ্কে থাকতো সাদিয়া, হাফিজসহ স্কুলের সব ছাত্রছাত্রী। তার ওপরে স্কুলের ছাত্রছাত্রী এত বেশি ছিলো যে একদম গাদাগাদি করে বসতে হতো তাদের। অনেকে পেছনে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতো।
কিন্তু এখন আর আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করতে হয় না তাদের। এ বছর তাদের পুরো স্কুলটি চলে এসেছে পুরনো ভবনের পাশে নির্মাণ করা ছয়তলা নতুন ভবনে। গাদাগাদি করে বসতেও হয় না। ছয়তলা স্কুলভবনে তাদের স্কুলের প্রায় ২ হাজার ৭শ’ ছাত্রছাত্রীর সবার ভালোই জায়গা হয়ে গেছে। আগের ভবনে টয়লেটেরও সমস্যা ছিলো। নতুন ভবনে সে সমস্যাও নেই- জানালেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার।
তিনি জানান, আশপাশের গার্মেন্ট শিল্পাঞ্চলের মাঝে এ স্কুল। তাই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক। সাধারণত অন্য স্কুলে ৪শ’ থেকে ৫শ’ ছাত্রছাত্রী থাকে। কিন্তু এ স্কুলে বর্তমানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ২ হাজার ৭শ’। চার বছর আগে ছিলো সাড়ে ৩ হাজার। কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হওয়ায় এবং কয়েকটি কারখানা অন্য জায়গায় শিফট হওয়ায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ছাত্রছাত্রীর এ বিশাল সংখ্যা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরে আসলে তারা বিষয়টি সহানূভূতির সাথে বিবেচনা করে এ স্কুলে বিশেষ বরাদ্দ দেয়। ২ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে এলজিইডি ২০১৬ সালের শেষদিকে এর নির্মাণ কাজ শেষ করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে আমরা এ ভবনে চলে আসি। ৬ তলা ভবনে ২২ টি ক্লাস রুম, দুইটি অফিস কক্ষ, বারোটি টয়লেট রয়েছে।
সেহারচরের মতো ছয়তলা ভবন না হলেও হাজীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সরকার নির্মাণ করে দিয়েছে দুই তলা একটি নতুন ভবন। এ স্কুলের ছাত্রছাত্রী প্রায় সাড়ে ৮শ’। আগে দুইটি পুরনো ভবনে চলতো স্কুলের কাজ। এর মধ্যে একটি ভবন ছিলো ১৯৭০ এর। বৃষ্টি হলেই এই ভবনটি পানিতে তলিয়ে যেতো। সরকারের নতুন তৈরি করা স্কুল ভবনটি বেশ উঁচু করে নির্মাণ করা হয় যাতে জলাবদ্ধতা হলে পানি ক্লাসরুমে না ঢুকতে পারেÑ জানালেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ব্যয় বেশি। যা শ্রমিকদের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এ শ্রমিকদের সন্তানদের আশ্রয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। তাই শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বা তিনগুণ। এ সমস্যা সমাধানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরকার একটি তালিকা তৈরি করে। এর প্রেক্ষিতে তৃতীয় প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৩) এর আওতায় সরকার ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সরকারি স্কুল ভবন করার উদ্যোগ নেয়। এর কোনোটা দুই তলা, কোনোটা তিন তলা বা চারতলা। সেহারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলটি একমাত্র ছয় তলা।
এলজিইডি’র নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন পাল জানান, এসব ভবন তৈরিতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৩৮টি ভবনের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ। এগুলো এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। কোন কোনটিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। বাকিগুলোর একটির কাজ ৮৫ ভাগ, একটির ৪০ ভাগ ও বাকিগুলোর কাজ ১০ থেকে ২৫ভাগ শেষ হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিন্দ্র কুমার মন্ডল জানান, নারায়ণগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা ৫৪৬ টি। নারায়ণগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন এলাকার অনেকগুলোর ধারণক্ষমতার তুলনায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি। ফলে শিফটিং করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। নতুন ভবনগুলোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন ৩৮টি ভবন তৈরি হওয়ায় যেগুলোতে ছাত্রছাত্রী বেশি বা ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে সেগুলোতে নতুন ভবনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমরা চাইবো নারায়ণগঞ্জের প্রাথমিক স্কুলগুলোর ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি আরো বরাদ্দ আসুক।