জয়পুরহাটের কৃষকরা আমন ধান কাটা মাড়াই করছেন মহা ধুমধামে

618

জয়পুরহাট, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ধুমধামে রোপা আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। ইতোমধ্যে জেলায় শতকরা ৬০ ভাগ ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলার সর্বত্র এখন কৃষকরা আমন ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে আমন ধান লাগানোর পরে তেমন কাজ থাকতো না কৃষক ও মজুরদের হাতে ফলে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজের অভাবে মঙ্গা হিসেবে দেখা দিতো জয়পুরহাটের মানুষের নিকট। চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হতো দৈনন্দিন খরচ চালাতে। শেখ হসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলশ্রুতিতে উদ্ভাবন করা হয় ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ বিনা-৭, জিরা শাইল, গুটিস্বর্ণা ও কাটারী ভোগ জাতের আমন ধান। এছাড়াও স্থানীয় মামুন ও রনজিত, পটল পাইরী, চয়ন জাতের ধান স্বল্প সময়ে (৯০ দিন) অল্প খরচে কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করে। সে কারণে সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে চিরতরে মঙ্গা দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচীর আওতায় প্রায় বছর ব্যাপী ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, হত দরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী হিসেবে ১০ টাকা কেজি চাল ও ওএমএস সহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। ফলে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ ও বিনা-৭ জাতের আমন ধান আগাম জাত হওয়ায় স্বল্প সময়ে এ ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন। নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০২০-২০২১ রোপা আমন চাষ মৌসুমে ৭১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ৬৭ হাজার ৯৮০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ৩ হাজার ৪১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের রয়েছে এক হাজার ২০ হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭শ ৫৮ মেট্রিক । জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় রোপা আমন চাষ সফল করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিএডিসি (বীজ) থেকে উন্নত মানের ধানবীজ সরবরাহ করা হয় কৃষকদের মাঝে। আলু চাষের জন্য এ জেলার কৃষকরা বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে থাকেন। কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম এ প্রতিনিধিকে বলেন, এবার ৯ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭ ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন, একই গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম এবার ৬ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ১৭/১৮ মন ধান পেয়ে খুশি বলে জানান। নতুন ধান বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে। এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। এবার আমনের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত শতকরা ৬০ ভাগ ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানিয় কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় রোপা আমন চাষ সফল করতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিস নিবিড়ভাবে মনিটরিং করে। এবার বীজ, সার ও বৃষ্টিপাতের কোন সমস্যা ছিলনা। ফলে গতবারের মতো এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর ২০১৯-২০ রোপা আমন চাষ মৌসুমে জেলায় ৭৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছিল। এতে চালের উৎপাদন হয় ২ লাখ ২০ হাজার ৫ শ ৭০ মেট্রিক টন। যা জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স. ম মেফতাহুল বারি।।