জয়পুরহাটে চিচিংগা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

625

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ধান চাষের অনুপযোগী এবং বন্যার পানি থেকে মুক্ত উচু জমিতে চিচিংগা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুন-গ্রামের কৃষকেরা। তাদের চিচিংগার বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে এখন হাসি ।
চিচিংগা উচ্চফলনশীল, কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক লাভ জনক ফসল হওয়ায় চাষিরা চিচিংগার চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেক পরিবারে ফিরে এসেছে সুখ ও স্বচ্ছলতা। চলতি বছর এ গ্রামের আশেপাশে প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ বিঘা উচু জমিতে চিচিংগা চাষ হয়েছে। কালাই উপজেলার বেগুন-গ্রামের কৃষক জালাল মিয়া, মো.রেজাউল ইসলাম, আব্দুল নূর, ইসমাইল হোসেন, ইমদাদুল হক, আবু তাহের ও মোসলেম উদ্দিনসহ অনেকেই পালোইগাড়ি মাঠে চিচিংগার চাষ করে লাভবান হয়েছেন। বেশী লাভের আশায় ধান, আলু চাষের পরিবর্তে উচু জমিতে অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসলের পাশাপশি অপ্রচলিত চিচিংগা চাষ করছেন । ক্রেতাদের কাছে চাহিদা থাকায় জমি থেকে বিক্রি হওয়ার ফলে চাষিদের পরিবহন-খরচ ও সময় দু‘টোয় সাশ্রয় হচ্ছে । জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পাইকারেরা জমি থেকে চিচিংগা কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। চিচিংগা চাষে কম খরচে স্বল্প সময়ে অধিক লাভ জনক হওয়ায় এ ফসল চাষ বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে । বেগুন-গ্রামের চিচিংগা চাষি মো.রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরে এ সময়ে যে জমিতে ধান চাষ তেমন হয়না ও বন্যার পানিতে ডোবেনা সেইসব উচু জমিতে চিচিংগা চাষ করা হয়। এবার ৪৫ শতক জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের চিচিংগা চাষ করেছি। এ ৪৫ শতক জমিতে চিচিংগা চাষের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে সেই জমি থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা চিচিংগা বিক্রি করেছি। আগামী প্রায় ৪ সপ্তাহ ঐ চিচিংগা বিক্রি হবে। বর্তমান পাইকারী বাজারে চিচিংগা দাম অনেক ভালো। আশা করছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে। একই গ্রামের চিচিংগা চাষি ইমদাদুল হক বলেন, গত বছরে ১০ শতক নিজ জমিতে চিচিংগা চাষ করেছিলাম। সেই জমিতে চিচিংগা চাষ করতে সেচ, সার, বীজ ও চাষ বাবদ প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সেই জমি থেকে উৎপাদিত চিচিংগা প্রায় ২২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। চলতি বছরে ২০ শতক জমিতে চিচিংগা চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে এবং বর্তমান বাজারে চিচিংগা দামও ভালো পাচ্ছি। এ চিচিংগার চাষ করে এ এলাকায় অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। উপজেলার বেগুন-গ্রামের চিচিংগা পাইকারী ব্যবসায়ী আমিনুর ও রফিকুল ইসলাম বলেন, এ এলাকর উৎপাদিত চিচিংগাগুলো গুনগত মান খুব ভালো। তাই ঢাকা-মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে চাহিদা অনেক বেশি । চাষিদের জমি থেকে প্রতি মণ চিচিংগা ১,৩০০ থেকে ১,৪০০ টাকায় কিনছেন বলে জানান তারা ।
চিচিংগার গুনাগুন বিষয় নিয়ে কালাই উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু তাহের মো.তানভীর হোসেন বলেন, চিচিংগা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। চিচিংগা শরীরের যেকোনো ধরনের ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়। এতে প্রচুর পরিমান আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ সবজিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। তাই শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়। চিচিংগা দেহের পানি-শূন্যতা রোধ করতে পারে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। জ্বরের সময় চিচিংগা খেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে। চিচিংগা ডায়াবেটিস ও জন্ডিসের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এ সবজিতে ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। তাই চিচিংগা একটি ভালো সবজি।
কালাই উপজেলার কৃষি অফিসার মোছা.নীলিমা জাহান বলেন, এ বছরে চিচিংগার চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। চিচিংগা চাষ ছাড়াও বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি চাষ হয়েছে। এ চিচিংগা চাষের জন্য কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহের পরামর্শ ও বালাইনাশক ব্যবহার না করা জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমান বাজারে চিচিংগা চাহিদা ও মূল্য ভাল থাকায় দিন দিন চিচিংগা সবজি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।