বাসস সংসদ-৭ (প্রধানমন্ত্রী) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ইতিহাস থেকে কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

325

বাসস সংসদ-৭ (প্রধানমন্ত্রী) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সাধারণ আলোচনার প্রস্থাব-ভাষণ
ইতিহাস থেকে কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার অনুপম দেশ প্রেম এবং দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য আজন্ম জীবন সংগ্রামে জেল, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতনের করুণ উপাখ্যানের কিয়দংশ জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে দেয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃতি তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন,‘আমরা একটা আদর্শের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমার সরকারের নীতি হচ্ছে স্বাধীনতার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। সাধারণ মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই স্বাধীনতার সুফল তারা যেন ভোগ করতে পারে অবশ্যই তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।’
কাজেই বাঙ্গালি জাতির মুখে হাসি ফোটানোটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি,বলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি জনসভায় দেওয়া ভাষণে জাতির পিতা আরো বলেন,‘ভিক্ষা করে কেউ কোনদিন সম্মান নিয়ে বাস করতে পারেনা। আমি আমার সাড়ে ৭ কোটি লোককে সারাজীবনের জন্য ভিক্ষুকের জাত করতে চাইনা। আমি চাই একটি স্বয়ংসম্পূর্ন দেশ, একটি শোষণহীন দেশ, যে দেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে,সুখে বসবাস করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সব সময় বলতেন ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকেনা। বাংলাদেশটাকেও আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ নিয়েই গড়ে তুলতে চাই, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন,‘ দুর্ভাগ্য আমাদের বাঙ্গালির জীবনে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট না আসলে জাতি হিসেবে বাঙ্গালি অনেক আগেই উন্নত হতে পারতো। কারণ জাতির পিতার মধ্যে একটা আত্মবিশ^াস ছিল । কারণ এই বাঙ্গালি জাতিকে নিয়েই তিনি মুক্তিযুদ্ধে করে বিজয় অর্জন করেছিলেন।
১৯৭৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৫ ডিসেম্বর দেয়া ভাষণে জাতির পিতা বলেন,‘এই বাংলায় সম্পদের অভাব নেই। কিন্তু তা সদ্ব্যবহারের জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমরা যদি বাংলার সম্পদ বাংলার মাটিতে রাখতে পারি, সমাজতান্ত্রিক উপায়ে বিলি-বন্টন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে পারি এবং সকলে মিলে কঠোর পরিশ্রম করে কল-কারখানায়, ক্ষেতে-খামারে উৎপাদন বাড়াতে পারি তবে, ইনশাল্লাহ আমাদের ভাবি বংশধরদের শোষণমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধশালী এক ভবিষ্যত উপহার দিতে পরবো।’
অর্থাৎ জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই দেননি, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ’৭০ এর নির্বাচন এবং নিখীল পাকিস্থানে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন প্রসংগে বলেন, ’৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০টি রাজনৈতিক দলের আরো একটি জোট অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ কখনও জিততে পারবেনা, কিন্তু গোটা পাকিস্তানেই আওয়ামী লীগ যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেল তখন আর ক্ষমতা হস্তান্তর হলোনা। ’
সংসদ নেতা বলেন, তখনই তিনি (বঙ্গবন্ধু) অসহযোগের ডাক দিলেন, দিলেন ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। তিনি পুরো ভাষণে একটি যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়ে যান। তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
শেখ হাসিনা বলেন,যে ভাষণ আজ বিশে^ ঐহিহ্যের প্রামান্য দলিল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে কিন্তু ’৭৫ এর পর তা এ দেশে বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামও সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার বিভিন্ন কুটনৈতিক সাফল্যের প্রতি আলোকপাত করে বলেন, ‘জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ পুণর্গঠনকালেই ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন, ’৭২ সালে আমরা কমনওয়েলথ ও আইএমএফ এবং ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ এবং ওআইসি’র সদস্য পদ ও লাভ করি। কারণ জাতির পিতার মত বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দেশ প্রেমকে বিশ^ স্বীকৃতি দিয়েছিল। সে জন্য এত দ্রুত এতগুলো স্বীকৃতি এবং সুযোগ লাভ করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বদেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ভাষণে বঙ্গবন্ধু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে নাই। তাঁকে এই বাংলাদেশে, যাদেরকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতেন আর সেই মানুষের হাতেই তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
‘যেখানে ফিদেল ক্যাষ্ট্রো তাঁকে সাবধান করেছিলেন। মিসেস গান্ধীও বলেছিলেন- একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে সাবধান। অথচ, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এরা আমার দেশের ছেলে, এরা আমার সন্তানের মত, কাজেই এরা আমাকে মারবেনা, মারতে পারেনা। আমি তাদের জন্য কাজ করি। তারা আমাকে কেন মারবে।,’যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধু) একটা বিশ^াস এদেশের মানুষের ওপরে ছিল। তিনি এই বিশ^াস ঘাতকদের স্বচক্ষে দেখে গেলেন । কিন্তু কারা এর পেছনে রয়েছে জানতে পারলেন না। এটাই দুর্ভাগ্য যে তাঁর বিশ^াসটা বাঙ্গালি জাতি রাখতে পারলোনা। এরা অবশ্যই একটি মুষ্টিমেয় ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। এদেশের আপামা জনগণ নয়।’
তিনি বলেন, ‘কারণ কর্ণেল ফারুক বিবিসিতে দেয়া একটা স্বাক্ষাৎকালে বলেছেন তিনি (বঙ্গবন্ধু) এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে, অনেক অপ্রপচার করেও তাঁর জনপ্রিয়তা এতটুকু কমানো যায়নি। তাই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য হত্যা করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। কাজেই তারাতো আত্মস্বীকৃত খুনী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পকিস্তানের কারাগারে জাতির পিতা কেমন অত্যাচার নির্যাতনের মধ্যে দিন কাটান তা কখনও বলেন নি। রেহানা জিজ্ঞেস করলে শুধু বলতেন- জানতে চাসনা, সহ্য করতে পারবি না। ইয়াহিয়া খান তাঁকে ফাঁসির হুকুম দেয় এবং জেলখানার মধ্যে তাঁর সেলের কাছে তাঁর জন্য কবরও খোঁড়া হয়। অথচ তাঁর মৃত্যুর পর কত অপ্রচার চালানো হয়, কত অপবাদ দেয়া হয়।’
তৎকালিন বিখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্টকে দেওয়া জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বাক্ষাৎকারের প্রসংগও টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) কোয়ালিফিকেশন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন,‘আই লাভ মাই পিপল।’ আর ডিসকোয়ালিফিকেশন-‘আই লাভ দেম টু মাচ।’
শেখ হাসিনা এ দিনের বিশেষ অধিবেশণে রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের ওপর আলোচনায় বলেন, রাষ্ট্রপতি অনেক সুন্দর একটা ভাষণ দিয়ে গেছেন। ইতিহাসের অনেক না জানা কথা অনেকে জানার সুযোগ পেয়েছেন। অনেক সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখবেন, যারমধ্য দিয়ে আরো অনেক কিছু জানার সুযোগ হবে। আর এর মাধ্যমে এই মহান নেতার প্রতি আমরা আমাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবো।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের যে একটা আত্মপরিচয় দিয়েছেন, একটা রাষ্ট্র দিয়েছেন এটাই সব থেকে বড় কথা। এই রাষ্ট্রটাকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত করে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
বাসস/এএসজি-এফএন/২৩৫০/স্বব