এসএমইখাতে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে : ওয়েবিনারে বক্তারা

583

ঢাকা, ১ নভেম্বর, ২০২০ (বাসস) : রাজধানীতে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, করোনার (কোভিড-১৯) ফলে প্রচলিত এসএমই শিল্পকে টেকসই ডিজিটাল বিজনেসে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তারা বলেন,দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সাথে খাপ খাইয়ে চলার মতো প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে হবে।
আজ রোববার ঢাকায় ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন ফর স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত “করোনা-পরবর্তী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের ভূমিকা : আর্থিক ও শিল্প প্রবৃদ্ধি” শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি এ ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন।
বক্তারা বলেন,করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করলেও বাংলাদেশের এসএমইখাতের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। করোনার ফলে এদেশে প্রযুক্তিবান্ধব নতুন নতুন এসএমই এবং সাব-কন্ট্রাক্টিং শিল্পের বিকাশ ও মূল্য সংযোজনের সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন ফর স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রধান এস এম জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিয়ত উল্লাহ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ওমানের রাষ্ট্রদূত তায়েব সালিম আলভী, নেপালের রাষ্ট্রদূত ডক্টর বানশিধার, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মাসুদুর রহমান, ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অফ এসএমই সৈয়দ আবদুল মোমেন, মালদ্বীপের এসএমই সংগঠক মোহাম্মদ আলী জানাহ, বাংলাদেশে ইউনিডোর কান্ট্রি প্রতিনিধি জাকি-উজ-জামান, নেদারল্যান্ডের মাইন্ড মাস্টার মন্ডোর প্রেসিডেন্ট এরিক মেইজার এ ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর প্রভাবে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক জিডিপি’তে ৪দশমিক ৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির অব্যাহত রয়েছে।
তারা বলেন,বিশ্ব অর্থনীতির এ ধরনের নেতিবাচক অবস্থার মধ্যেও সরকারের সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত, পৃষ্ঠপোষকতা ও শিল্পখাতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের এসএমই খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ থাকলেও নতুন অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা কমে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ হয়েছে।
বক্তারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে এসএমইখাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার সুফল পৌঁছে দিতে ব্যাংকিং নীতিমালা সহজীকরণের পরামর্শ দেন। একই সাথে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে সহজশর্তে অর্থায়ন সুবিধা জোরদারের জন্যও তারা তাগিদ দেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উত্তরণে বর্তমান সরকার এসএমইখাতকে উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। করোনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদাভাবে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে এর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। পাশাপাশি করোনাকালীন পণ্য বিপণন সুবিধা সম্প্রসারণে এসএমই উদ্যোক্তা এবং ক্রেতাদের মধ্যে লিংকেজ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বিসিক উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স সেবা দিচ্ছে। সরকার গৃহীত উদ্যোগের ফলে শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রয়েছে এবং দেশের এসএমই খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
করোনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমইখাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।