মুক্তবাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকাতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে পণ্য-বৈচিত্র্যকরণ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে : শিল্পমন্ত্রী

790

ঢাকা, ২২ অক্টোবর,২০২০ (বাসস) : শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন মুক্তবাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকার লক্ষ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পণ্য-বাজারে টিকে থাকতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সকল শিল্প-কারখানাকে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি পণ্য-বৈচিত্র্যকরণের উদ্যোগ অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী ভৈরবস্থ বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সম্পন্ন করারও নির্দেশ প্রদান করেছেন।
ভৈরবে পাদুকা শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাদুকা শিল্পের সাথে জড়িত অনেক কারিগর ও শ্রমিক ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকা থেকে ভৈরবে স্থানান্তরিত হয়ে জুতা কারখানা স্থাপন করেছেন।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন পাদুকার অভ্যন্তরীণ বিপুল চাহিদা মেটাতে ভৈরব শিল্পনগরী প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সেখানে পাদুকা শিল্প উদ্যোক্তাদের চাহিদা মাফিক প্লট বরাদ্দ দিতেও বিসিক’কে নির্দেশনা প্রদান করেন।
শিল্পমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ নির্দেশনা প্রদান করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ পর্যালোচনা সভায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বিশেষ অতিথি ছিলেন।
শিল্প সচিব কে এম আলী আজমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট প্রল্প পরিচালক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের চলমান গতি ধরে রাখতে সংস্থা পর্যায়ের নিবিঢ় মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ে বিভিন্ন কারখানায় যন্ত্রাংশ বার বার মেরামতের পরিবর্তে নতুন মেশিনারি প্রতিস্থাপন করার ওপর জোর গুরুত্ব দিয়ে বলেন,মন্ত্রী কারখানা পর্যায়ে যে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত কারখানাগুলোর সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রফিট মোটিভ নিয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান। রাষ্ট্রায়াত্ত কারখানাগুলো লাভজনক হলে এর শ্রমিক-কর্মচারিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সুবিধা ভোগ করবেন বলেও মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন,বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করে সেগুলোকে রিফাইনিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) চিনিকলগুলোতে সারাবছর উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। তিনি চিনিকলগুলোর খালি জমিকে উৎপাদনশীল কাজে লাগানোর একটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপনের জন্য বিএসএফআইসি’র চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব অনুসরণ করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য সকলকে আহবান জানিয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কারখানাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি প্রাপ্য হলে পদোন্নতি প্রদান করা হবে।
উসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরিকে লাভজনক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
এ সভায়, সকল বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় জানানো হয়, সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্প নগরীর অবশিষ্ট সকল কাজ এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত করতে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সম্মত হয়েছে।
এছাড়াও, এ সভায় জানানো হয়, ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে দুটি বাফার গোডাউন নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরো পাঁচটি বাফার গোডাউন ডিসেম্বরের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেনা কল্যাণ সংস্থা এ সভাকে অবহিত করেছে।
‘এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট ইন ইটিএল’ প্রকল্পের আওতায় ছয়তলা ভবন ও প্রয়াজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডকে এলইডি বাল্ব উৎপাদন দ্রুত শুরু করার জন্যও এ সভা থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এছাড়াও, নরসিংদীর পলাশে নির্মাণাধীন ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরীর’ হ্যাজার্ড এন্ড অপারাবিলিটি স্টাডিজ ( হ্যাজোপ) সমাপ্ত হযেছে এবং সকল ক্রিটিক্যাল ইকুইপমেন্ট এবং ৭০ শতাংশ ননক্রিটিক্যাল ইকুইপমেন্টের ক্রয় আদেশ প্রদান করা হয়েছে বলেও প্রকল্প পরিচালক এ সভায় অবহিত করেন।