সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি

474

ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস): মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বুধবার ২১ অক্টোবর দুপুরের পর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেয়েছেন তারা। আজকে মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পরোয়ানা পাঠিয়েছেন।
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আনা তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন।
এ মামলায় কায়সারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সদ্য প্রয়াত এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদন্ডের যে রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল, আপিলে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও তা বহাল থাকে। কায়সারের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলেও তিনটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। এক সময়ের মুসলিম লীগ নেতা কায়সার ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। ‘কায়সার বাহিনী’ নামে দল গড়ে তিনি যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছেন, সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের মানুষ তাকে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবেই জানেন।
২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, কায়সার এতোটাই নগ্নভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন যে নিজের গ্রামের নারীদের ভোগের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হননি। সেই রায়ে সাতটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে মৃত্যুদন্ড দেয়, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্যও দেন। আর একটি ঘটনায় ছিল নির্বিচারে হত্যার অভিযোগ। এছাড়া অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যায় সংশ্লিষ্টতার চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং তিনটি অভিযোগে আরও ২২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আপিলের রায়ে তিনটি অভিযোগে কায়সারের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়েছে। তিনটি অভিযোগে তার প্রাণদন্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তিনটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং একটি অভিযোগে ৭ বছরের কারাদন্ড বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুদন্ড, আমৃত্যু কারাদন্ড, ১০ বছরের কারাদন্ড ও ৫ বছরের কারাদন্ডের পাঁচটি অভিযোগ থেকে কায়সারকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ।
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হওয়ার পর আপিলে আসা এটি নবম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো।
নিয়ম অনুযায়ী আসামি এই রায় রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। তাতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না বদলালে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তাতেও তিনি বিফল হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের পদক্ষেপ নেবেন।
২০১৩ সালের ১৫মে ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে সেই রাতেই গ্রেফতার করা হয় মুসলিম লীগের এই সাবেক নেতাকে। বয়স ও স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালে তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিনও দেয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদন্ডের রায় আসে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কায়সার। চলতি বছর আপিলের রায়ে তার মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। নিয়ম অনুযায়ীই সুপ্রিমকোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। সেটি হাতে পেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ।
পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন আসামিপক্ষ। কায়সারের আইনজীবী রিভিউ করার কথা জানান।
রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।