বিদেশে পালিয়ে গেলেও রায়হান হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তকে ফিরিয়ে আনা হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

465

সিলেট, ২০ অক্টোবর, ২০২০(বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন,সিলেটে রায়হান হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া (সাময়িক বরখাস্ত) বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তিনি আজ দুপুরে সিলেট নগরীর আখালিয়ায় নিহত রায়হান আহমদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের শান্তনা প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, “ আমার বিশ্বাস আকবর এখনও দেশের বাইরে যায়নি। কারণ রায়হান হত্যার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে দেশের সকল সীমান্ত ও ইমিগ্রেশন গুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে আকবর বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ”
এর আগে সিলেটের রাজন হত্যার আসামিকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে এবং তার শাস্তিও হয়েছে এবংএ ক্ষেত্রেও তা-ই হবে উল্লেখ করে কোন তথ্য থাকলে সাথে সাথে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহবানও জানান মন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে দু’ঘন্টার এক সংক্ষিপ্ত সফরে সিলেট আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ছুটে যান নিহত রায়হানের বাড়ি আখালিয়ায়, সেখানে তার পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড, এ কে আব্দুল মোমেন। এসময় রায়হানের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে রায়হান হত্যার ন্যায়বিচারেরও আশ্বাস দেন তিনি।
মন্ত্রী তাঁর পক্ষ থেকে অর্থাৎ আব্দুল মোমেন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রায়হানের পরিবারকে নগদ দ’ুলক্ষ টাকা তুলে দেন। পরে নিহত রায়হানের বাড়ির আঙ্গিনায় সিলেটের সকল গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন, ড. মোমেন।
এসময় তিনি আরো বলেন ,সব জায়গায় ভালো মন্দ মিলে সব আছে, আমাদের দেশেও তাই, পুলিশেও ভালো মন্দ সবই আছে, এসআই আকবরকে পুলিশের জন্য লজ্জ্বা উল্লেখ করে বলেন, এরকম দুএকজন কুলাঙ্গারের কারণে পুলিশ বাহিনীও লজ্জ্বিত। কিন্তু পুলিশের কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে না। সুৃষ্ঠ তদন্ত চলছে।
মন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় জড়িত সদস্যদের বাঁচাতে কোনো ধরণের অপচেষ্টা করেনি পুলিশ। আমাদের পুলিশ খুবই দক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আলোচিত সকল বড় বড় ঘটনার সকল অপরাধীদের গ্রেফতারেও তারা সক্ষম হয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় গত কয়েক বছরে সিলেটে ছিনতাই, ডাকাতি,সন্ত্রাস, রাহাজানির মতো ঘটনা আগের তুলনায় কিছুই নেই বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, রায়হান হত্যার ঘটনায় একজন ছাড়া বাকী সবাই পুলিশের নজরদারিতে আছে, এ ঘটনায় পিবিআই এর পাশাপাশি সরকারের সবগুলো সংস্হা কাজ করছে। তবে এ ক্ষেত্রে কারো উপর যাতে কোন অন্যায় অবিচার করা না হয় সেটাও অনুসরণ করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এস আই আকবরকে পালিয়ে যেতে কেউ সাহায্য করেছে কি না সেটার ও তদন্ত চলছে। যদি এরকম কেউ কিছু করে থাকেন তাহলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের সবাই এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চান। ফলে রায়হানের সুষ্ঠ বিচার হবে, এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই ধরণের কাজ যেনো সিলেটে তথা বাংলাদেশের মাটিতে আর না ঘটে এরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরীর আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ (২৪) কে ধরে নিয়ে আসে বন্দরবাজার থানা পুলিশ। ওই রাতে ফাঁড়িতে তার ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ এবং তাকে ছেড়ে দিতে টাকা দাবি করে। এ এছাড়াও নির্যাতনের পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১১ অক্টোবর সকালে রায়হান আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলার পর এর তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) কে। এ ঘটনায় বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্তব্যরত ৩ পুলিশ সদস্যকে সোমবার সিলেটের আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি গ্রহন করা হয়েছে। অন্য একজনকে আজ আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।