আমাকে ভুল বুঝবেন না : সাকিব

411

ফ্লোরিডা, ৪ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সাহায্যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহবান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে সাকিব এই বার্তা দেন। সাকিবের ঐ বার্তা শুনে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মানুষের সমালোচনা নিজ বার্তার কমেন্টে দেখতে পান সাকিব। তাই ফেসবুক নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে ঐ বার্তাটি ডিলেট করে দেন তিনি। এরপর আবারো রাত ১০টা ২৯ মিনিটে লাইভে আসেন সাকিব।
এবার ভিডিওটিতে এসে তাকে ভুল না বুঝার আহ্বান জানান সাকিব। তিনি ভিডিওর বার্তায় বলেন, ‘আমার সকল ভক্তদের জানাচ্ছি যে আপনারা হয়তো আমার কথায়, আমাকে ভুল বুঝছেন। দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমারও আপনাদের সবার মতো পরিবার আছে। যাদের নিরাপত্তা আমার কাছেও মূল্যবান। আমি আপনাদেরই একজন, আমি সব সময় আপনাদের সঙ্গে ছিলাম-আছি এবং কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতেও থাকব। আমি শুধু বলতে চাই যে, আপনাদের আন্দোলনকে একটি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের সরকারকে সুযোগ দেওয়া উচিত। যেন সরকার খুব দ্রুত আপনাদের দাবি বাস্তাবায়ন করতে পারে।’
এই লেখার নিচে এক ভিডিও বার্তায় সাকিব বলেন, ‘আমি তোমাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আবারও তোমাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এটাও বলতে চাই, এটা শুধু শিক্ষার্থীদের দাবি হওয়া উচিত নয়, এটা বাংলাদেশের সকল মানুষের দাবি হওয়া উচিত। কারণ প্রতি বছর রাস্তায় দুর্ঘটনা অনেক হচ্ছে এবং অনেক প্রাণ ঝড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আমার সন্তান আছে, আপনারা যারা ভিডিওটি দেখছেন তাদের অনেকেরই সন্তান আছে, পরিবার আছে। আমরা সবাই চাই যে, আমাদের সন্তানেরা নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারুক। সেই দিক চিন্তা করলে এই দাবিটা বাংলাদেশের সকল মানুষের হওয়া উচিত। এ কারণেই সকল শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিতে চাই যে তোমরা আমাদের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছ।’
সাকিব আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত আছেন। তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং করছেন। যা বাস্তবায়ন হতে হয়তো একটু সময় লাগবে। আমাদের সকলের এখন ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য এখন বোঝানো উচিত। এই দাবি যদি পূরণ না হয় এবং ভবিষ্যতে যদি আমাদের এই আন্দোলন আবার করতে হয় তোমরা আমাকে তোমাদের পাশে সব সময় পাবে, এই ওয়াদা আমি করছি। আশা করি, তোমরা আমার বার্তাটি বুঝতে পেরেছো। কারন আমরা সবাই মিলে পারি একটি সুন্দর বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।’
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বাংলায় একটি বার্তা পোস্ট করেন সাকিব। তিনি লিখেন, ‘আমি এখন ফ্লোরিডায় আছি। আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্তে আমার তরুণ ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থী দিয়া ও আবদুল করিম নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি প্রচন্ড মর্মাহত ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম তার সহপাঠী থেকে শুরু করে সারাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা দোষীদের শাস্তি দাবি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে, তখন গর্ববোধ করেছি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে। দেশে থাকলে আমিই তোমাদের অটেগ্রাফ নেয়ার জন্য চলে আসতাম। তোমাদের সাধুবাদ জানিয়ে বলতে চাই, তোমাদের দাবি কার্যকর হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ছাড়াও নিরাপদ সড়ক আইন করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অবস্থায় তোমাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো, ক্লাসে ফিরে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে। তোমরা যা করেছ তা এ দেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ অর্জন সফল হবে তোমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে। তোমাদের দাবি পূরণ হয়েছে এবং হচ্ছে। ব্যত্যয় ঘটলে আমাকে পাবে তোমাদের সাথে।’
সম্প্রতি রাজধানীতে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। হাতে প্লাকার্ড নিয়ে, যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষাসহ রাস্তার যানবাহনগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিভিন্ন সড়কে মানবন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনও করছে তারা।