রাজনৈতিক রং চড়িয়ে যাতে কেউ ফাঁয়দা হাসিল করতে না পারে, তার জন্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক কাদেরের

764

ঢাকা, ৪ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়িয়ে যাতে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি আজ দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানান।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, ডা. দীপুমনি এমপি, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, একেএম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা রাজনীতির হীন মতলব নিয়ে এ আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করে নিজেদের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তাদের সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন থাকতে হবে।’ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফির যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল সংলগ্ন সড়কে দুর্ঘটনায় দু’শিক্ষার্থী নিহতের প্রেক্ষাপটে তাদের নয়দফা দাবি সরকারের কাছে যৌক্তিক প্রমান হওয়ায় তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালক, বাসের মালিককে আটক করা হয়েছে। তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। দুর্ঘটনায় নিহত দু’পরিবারকে ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
নিহত দু’শিক্ষার্থীর পিতা-মাতা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবীর মধ্যে বেশ কয়েকটি দাবী বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্ডারপাস নির্মানের দাবী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিজাইনের কাজ কমপ্লিট হয়েছে। ডিপিপির মাধ্যমে কাজ হবে বলে দরপত্র আহবানের কোন প্রয়োজন হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে স্পীডব্রেকার নির্মানের দাবীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যেভাবে স্পীডব্রেকার নির্মান করা হয় তার চেয়েও আধুনিকভাবে অর্থাৎ র‌্যাম্বল স্টিক পদ্ধতিতে স্পীডব্রেকার নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের বিষয়টিও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন,‘ আইনমন্ত্রী আগামী সোমবার সড়ক পরিবহন আইনটি মন্ত্রীপরিষদে উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। আইন মন্ত্রণালয় যথাযথ বিবেচনা করে আইনটি ক্যাবিনেটে উপস্থাপন করবেন। সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইনটি পাশ করা হবে বলে আশা করি। মন্ত্রীসভার অনুমোদনের পর তা জাতীয় সংসদে পাশ হবে।’
জাবালে নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী কাদের বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফিটনেস বিহীন সকল গাড়ীর রুট পারমিট বাতিল করা সম্ভব নয়। কারণ বিআরটিএ’র সে পরিমাণ লোকবলের প্রয়োজন তা নেই। আগে বিআরটিএ’র মাত্র ১ জন নির্বাহী মেজিস্ট্রেট ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ৫ জনে বাড়ানো হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব তাদের এদাবী মেনে নেওয়া হবে। সরকার ফিটনেস বিহীন গাড়ীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইসেন্স বিহীন ভূঁয়া গাড়ীর চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ফিটনেস বিহীন গাড়ীর রুট পারমিট বাতিলের জন্য নির্বাহী মেজিস্ট্রেটরা কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের নয়দফা দাবীর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। তিনি ইতোমধ্যে তা করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নয়দফা দাবীর মধ্যে যে দাবীগুলো পূরণে আইনের কভারেজের দরকার নেই সেগুলি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর যে দাবীগুলো পূরনের জন্য আইনের কভারেজের প্রয়োজন তা সড়ক পরিবহন আইন পাশ করার পর বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, দলীয়ভাবে কেউ কেউ আন্দোলকে সমর্থন দিচ্ছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়ে কেউ কেউ বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য থেকে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় থাকে না। তারা রাস্তায় থাকলেও কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন নি তারা। তাদের নিষ্পাপ আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ ঘটে তখন ভয় হয়। ঢাকা কলেজ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাখার সাবেক সভাপতির ছবি প্রদর্শন করে তিনি বলেন, তারা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের গাড়ী ভাংচুরের উস্কানী দেয়। তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে তারা চলে যায়। কাদের বলেন, আমরা ধৈর্য্যরে ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে সব কিছু লক্ষ্য ও পর্যবেকক্ষণ করছি। যারা আন্দোলনের ভেতর অনুপ্রবেশ করে অপকর্ম করছে তাদের ছবি ও পরিচয় সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন মূলক কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। পুলিশও ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে যাবে। শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে ঘরে ফিরে যাবে। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শিক্ষক, অভিবাভকসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোভাবে বুঝালে তারা অনুধাবন করে ক্লাশে ফিরে যাবে।
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।