চিম্বুকে ঢাবি ছাত্রের ইয়াং বং হাউস

603

বান্দরবান, ১৬ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : বান্দরবান- থানচি সড়কের চিম্বুকের ১৪ কি.মি গেলেই দেখা মিলবে বাঁশ বেতের তৈরি পরিচ্ছন্ন ছোট একটি দোকান। দোকানের কাছে গেলেই শোনা যাবে চা বানানোর টুংটাং শব্দ। পর্যটক আসলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন উঠতি বয়সি এক যুবক, নাম দন ওয়াই ম্রো। বেশ ভূষা দেখে মনে হবে যেন অল্প শিক্ষিত যুবক। পরিচয় দিতেই জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । আর দোকানের নাম রেখেছেন ‘ইয়াং বং আইস ব্রেকিং হাউস’। ম্রো ভাষার ইয়াং বং হলো চিম্বুক পাহাড়ের আদি নাম।
ঢাবিতে পড়ে চিম্বুক সড়কে চা আর ফলের দোকান এমন প্রশ্নে দন ওয়াই জানালেন, করোনার মহামারীর সময়ে ভার্সিটি বন্ধ। তাই অলস সময় না কাটিয়ে এ দোকান দেওয়া। দোকান দেওয়াটায় মূল উদ্দেশ্যে নয় । এর পেছনে আছে স্বপ্ন । স্বপ্নের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ দোকান।
সমতল থেকে প্রায় ১৫০০ ফুট উপড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে বাঁশ, বেত আর ছন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ দোকান। আশে-পাশে কোন দোকান না থাকায় পর্যটকরা একটু শ্রান্তির জন্য থামেন এ দোকানে। এ দোকান থেকে দেখা যায় হাজারো সবুজ পাহাড়, মেঘ আর বৃষ্টির খেলা। শুক্রবার আর শনিবার হলেই সারাদিন ভিড় লেগে থাকেই দোকানে। দোকানে কোন কর্মচারী না রাখায় যেন দম ফেলার ফুসরত থাকে না দন ওয়াই ম্রো’র।
স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, পাহাড়ের অনেক কিছু বিলুপ্ত। অনেকটা হারিয়ে গেছে। জীব বৈচিত্র, পাহাড়িদের সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য অনেকটা গেছে হারিয়ে। এছাড়াও অনেকে পাহাড় সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্য জানে। আমি সত্য জানাতে চাই।
দন ওয়াই ম্রোর সাথে কথা বলতে গিয়ে চারপাশের চোখ বুলাতেই দেখা যায়, দোকানের এক পাশে রাখা হয়েছে দেশের নামকড়া বিভিন্ন লেখকের বই । কেউ কেউ সেই বইয়ের পাতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন।
অনর্গল কথা বলা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা দন ওয়াই আরো বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি পাহাড় নিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই সংগ্রহ করছি। সেই সাথে সংগ্রহ করছি বিভিন্ন ডকুমেন্টারি। নিজের গ্রামে কিছু জমি আছে। ভবিষ্যৎ এ সেখানেই তৈরি করব পাঠাগার। পর্যটক হোক আর স্থানীয়রা হোক যে কেউ এসে পড়তে পাড়বেন এ পাঠাগারে, জানবেন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে।
দন ওয়াই ম্রো এর দোকানে আসা ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মো: সোহেল জানান, দোকানটা অনেক সুন্দর। এখান থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দোকানের পাশে দেখলাম কিছু বই রাখা হয়েছে। উদ্যোগটি ভালো।
সকালে সূর্যের আলো উঠতেই খোলা থাকে দন ওয়াই এর দোকান, বন্ধ হয় সন্ধ্যা ৭ টায়। চা আর প্রাকৃতিক ফল বিক্রি করে দিনে গড়ে প্রায় ১৭শ’ টাকা বিক্রি হয় তার পরিপাটি দোকানে। খরচ বাদে তার লাভ হয় ছয়শত টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসা নীলগিড়ি যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে ডন ওয়াই এর দোকানে চা খাচ্ছিলেন আনোয়ার হোসেন। কিছু জানতে চাইলে বলেন, এরকম নিরিবিলি পরিবেশে এক কাপ চা অন্য রকম ফিলিংস এনে দেয়। দোকানটি অনেকটা পরিপাটি। দোকানদারের সাথে কথা বলে মনে হয় শিক্ষিত যুবক।
চিম্বুক সড়কের রোয়াংছড়ি মৌজার জামিনি পাড়ার বাসিন্দা কারবারি (গ্রামপ্রধান) মেনরং ম্রো এর ছেলে দন ওয়াই ম্রো। অভাব-অনটনের সংসারে আট ভাই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ।
শিক্ষিত যুবক দন ওয়াই জানান, আগামী মাসে ক্যাম্পাস খুলবে। হয়তবা দোকানটাও বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ক্যাম্পাসে কাজ করব। অনেক জনকে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলেছি। অনেকে এগিয়ে আসবেন। সমাজকে কিছু দিতে চাই।