নিরাপদ মাতৃত্বের হার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে

817

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ৪ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : বর্তমান সরকারের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে জয়পুরহাট জেলায় নিরাপদ মাতৃত্বের হার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ জানায়, ৯৬৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট জেলা জয়পুরহাটের বর্তমান জনসংখ্যা হচ্ছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ১১৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৩ জন ও মহিলা রয়েছেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ২০৪ জন। জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা ইউনিটের সংখ্যা হচ্ছে ১৮৬ টি। স্যাটেলাইট ক্লিনিক ১৮৬ টি, ২ টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১১২টি। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ২০২০-২১ ভিশন অনুযায়ী গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দশটি বিশেষ উদ্যোগের সপ্তম হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির আওতায় সন্তানসম্ভবা মায়েদের মাতৃত্বকালীন যাবতীয় সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, জন্ম, মৃত্যু নিবন্ধন এবং নতুন বিবাহিত দম্পতি ও সন্তানসম্ভবা মায়েদের নিবন্ধিত করা, মা ও শিশুর খাদ্য ও পুষ্টির বিষয়ে সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান এবং জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য উন্নত চিকিৎসায় উপজেলা বা জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
স্থানিয় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় বর্তমানে সক্ষম দম্পতির সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৬৮ জন। এর মধ্যে পদ্ধতি গ্রহণকারীর সংখ্যা হচ্ছে এক লাখ ৭৮ হাজার ১৪৮ জন। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণকারীর হার (সিএআর) জাতীয় পর্যায়ে অর্জন শতকরা ৭২ % হলেও জয়পুরহাটের অর্জন হচ্ছে ৮৪ দশমিক ৬৪ ভাগ। যা বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে জয়পুরহাট। পরিবার পরিকল্পনা ব্যবহারকারীর হার (সিপিআর) জাতীয় পর্যায়ে শতকরা ৬২ % হলেও জয়পুরহাট জেলায় অর্জন হচ্ছে ৭৪ দশমিক ৫৫ ভাগ। এ ছাড়াও রয়েছে খাবার বড়ি শতকরা ৪৮ দশমিক ৫৮ ভাগ, কনডম ৭ দশমিক ৮২ ভাগ, ইনজেকশান ১৪ দশমিক ১৬ ভাগ, আইইউডি ১ দশমিক ৯৬ ভাগ, ইমপ্ল্যান্ট ৭ দশমিক ৭০ ভাগ, স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ (পুরুষ) ৮ দশমিক ৬৮ ভাগ ও মহিলা ১১ দশমিক ৫ ভাগ।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ জানায়, গত জুন পর্যন্ত জেলায় গর্ভবতীর সংখ্যা ৪ হাজার ৩০৭ জন। মান উন্নীত পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এক বছরে প্রসবের সংখ্যা হচ্ছে ৩২৪ জন। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৫০৪ জন ও সিজারিয়ান ৬৫ জন। গত এক বছরে জীবিত শিশুর জন্ম হয়েছে ৯ হাজার ৩৯ জন। এ ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী জয়পুরহাট জেলায় মাতৃমৃত্যুর হার (প্রতি হাজারে) হ্রাস পেয়ে বর্তমানে রয়েছে দশমিক ৪৪ ভাগ। শূন্য থেকে ১ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার (প্রতি হাজারে) হ্রাস পেয়ে জয়পুরহাট জেলায় বর্তমানে রয়েছে ৭ জনে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে জয়পুরহাটের অর্জন হচ্ছে দশমিক ৭০ ভাগ। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর বৃদ্ধি পেয়ে জয়পুরহাটের অবস্থান হচ্ছে শতকরা ৮৪ দশমিক ৬৪ ভাগ। প্রজনন হার বা নারী প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার হ্রাস পেয়ে জয়পুরহাটের অর্জন হচ্ছে ২ দশমিক ২ ভাগ।
সরেজমিন ঘুরে সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের বনখুর গ্রামে দেখা যায়, পরিবার কল্যাণ সহকারি আফরোজা বেগম মায়েদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তার অধীনে ৭৬০ জন সক্ষম দম্পতি রয়েছেন। আফরোজা বেগমের কর্ম তৎপরতায় সকলেই খুশি বলে জানান ওই এলাকার লাবণী বেগম, রনি বেগম, রাখী ও মালা। আফরোজা বেগম ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ পরিবার কল্যাণ সহকারী নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক ডা. কে এম জোবায়ের গালীব জানান, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবা সাধারন মানুষের দোড়গোরায় পৌঁছে দেয়ার জন্য নানা মূখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। বর্তমান সরকারের সফল উদ্যোগ হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোকে পুনরায় চালু করা।