দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী চালককে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে

412

ঢাকা, ১ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : ঢাকায় এয়ারপোর্ট সড়কে দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী গ্রেফতারকৃত চালককে আইন অনুযায়ি সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হবে।
এ ছাড়াও ফিটনেসবিহিন ও রুট পারমিটবিহিন গাড়ী যাতে চলাচল করতে না পারে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক যাতে গাড়ী চালাতে না পারে তার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে।
আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এয়ারপোর্ট রোড়ে দুর্ঘটনার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এর নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফারুক তালুকদার সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মন্ত্রীরা বলেন, এয়ারপোর্ট সড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশে প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার করে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হবে। ফিটনেসবিহিন ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ী যাতে চলাচল করতে না পারে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক যাতে গাড়ী চালাতে না পারে তার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে পরিচালিত লিমিটেড কোম্পানীগুলোর আওতাধীন সকল যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট ওই কোম্পানীর নামেই হতে হবে। কোম্পানী ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে চালাতে না পারে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিবে। প্রদত্ত রুট পারমিটে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত রুট পারমিট অনুযায়ী সকল গাড়ি চলাচল করবে। কোম্পানীর গাড়িগুলো যাতে অসম ও অবৈধভাবে প্রতিযোগিতামূলক চলাচল করতে না পারে তা বন্ধের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয় যে, দেশব্যাপী বাস ও ট্রাক টার্মিনাল এবং বিভিন্ন যানবাহনের স্টার্টিং পয়েন্টে প্রতিটি গাড়ির ফিটনেস ও রুট পারমিট এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা হবে। মালিক, শ্রমিক ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাগজপত্র চেক করবে। যারা এর ব্যত্যয় ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালক ও অন্যান্য শ্রমিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেতন করা, মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য দেশের সকল বাস ও ট্রাক টার্মিনালে নিয়মিত স্বল্পকালিন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হবে। এ জন্য মালিক ও শ্রমিক এবং ট্রাফিক পুলিশ যৌথভাবে কাজ করবে।
দুর্ঘটনা বন্ধের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুসৃত ৫টি দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসরনে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেশব্যাপী সড়ক ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এ ব্যাপারে সকল পর্যায়ের মালিক-শ্রমিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে।
সভায় আরো জানানো হয় যে, দুর্ঘটনা পরবর্তী তিন শতাধিক গাড়ী ভাংচুর হয়েছে। ৮টি গাড়ী পোড়ানো হয়েছে। গাড়ী পোড়ানোর ঘটনার সাথে সাধারণ ছাত্রদের সংশ্লিষ্টতা নেই। স্বার্থান্বেষী মহল এর পেছনে রয়েছে বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
দুর্ঘটনায় দু’জন ছাত্র নিহত হওয়ায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।
তারা নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানান। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ওই দুর্ঘটনায় যে সকল ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছে তাদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করেন।
মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু কারো কাম্য নয়। তাদেরও কাম্য নয়। প্রতিটি মৃত্যুই মানুষকে কাঁদায়। তারাও সন্তানের পিতা। তাই সন্তান হারানোর ব্যথা তারাও উপলব্ধি করছেন। তারা দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য সব সরকারের সময় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কাজ করেছেন। বর্তমান সরকারের সময় আরো বেশী কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।