বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ : জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সম্মিলিত বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

130

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২
শেখ হাসিনা-জলবায়ু-কোভিড
জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সম্মিলিত বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উদ্ভূত সংকট কার্যকরভাবে মোকাবেলায় সম্মিলিত বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ বর্তমানে বৈশ্বিক হুমকি। এই উভয় ঝুঁকি প্রশমনে আমরা আরও অনেক কিছু করতে পারতাম, পারা উচিত ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু এ দুটোই আমাদের ওপর এসে পড়েছে, সেহেতু তা মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় গতকাল প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলেন।
নিবন্ধে তিনি বলেন, গত মাসে আমার দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ফলে, এ বছর লাখ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন হবে।
দুর্যোগ কখনো একা আসে না। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর আসা বন্যার কারণে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আরো জটিল করে তুলেছে। ঘূর্ণিঝড়ের পথ থেকে ২৪ লাখ মানুষকে এমনভাবে সরিয়ে নিতে হয়েছে, যাতে তারা আরও বড় বিপদ কোভিড-১৯-এর মুখে না পড়ে।
কোভিড-১৯ এ সংক্রমণ ও মৃত্যুহার এখনো নিয়ন্ত্রণে থাকলেও একটি শতভাগ কার্যকর রক্ষাকবজ না পাওয়া পর্যন্ত উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।
কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক লকডাউন আমাদের বস্ত্র শিল্প ও রফতানি খাতকে আঘাত করেছে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসি বাংলাদেশি দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বর্তমানে বেকার।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও লাখ লাখ মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে।
সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বর্তমান শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় নাগাদ বিশ্বের সমুদ্রতীরবর্তী শহরগুলোর কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা তুলে ধরে শেখ হাসিনা এ বিপর্যয় মোকাবেলায় বিশ্বসম্প্রদায়কে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারি সম্মিলিতভাবে মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো নিঃসরণ না কমালে অন্য দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
বৈশ্বিক মোট নিঃসরণের ৮০ শতাংশের জন্য জি-২০ দেশগুলো দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছাড়া বিশ্ব সফলভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামাল দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ এবং এর বিরূপ প্রভাব সীমিত করতে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি এখনো আমাদের জন্য সেরা সুযোগ।
এ পর্যন্ত ১৮৯টি দেশ এই চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধে নিঃসরণ কমাতে সম্মিলিত পদক্ষেপের অঙ্গীকার রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীব দেশগুলোর তুলনায় ধনীদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপের লক্ষ্য অর্জনে তেমন কিছু করেনি উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে আন্তর্জাতিক তহবিল সংস্থান এখনো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
শেখ হাসিনা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে অধিকতর শক্তিশালী ও দক্ষ অর্থনীতি গড়ে তুলতে স্বল্প কার্বন সমাধান ও জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসকে সর্বোত্তম উপায় বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু সংকট এবং কোভিড-১৯ ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা প্রকট করে তুলেছে উল্লেখ করে নিবন্ধে বলেন, কোনো দেশই এখন বাকি বিশ্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে না।
বাসস/এএইচজে-এসএইচ/অনু-এবিএইচ-এইচএন/১৭১০/-এএএ/আরজি