বাসস ক্রীড়া-১ : জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

412

বাসস ক্রীড়া-১
ক্রিকেট-টি-২০
জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বাসেটেরেতে, ১ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : জয় দিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ শুরু করলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারী বাংলাদেশকে। এই জয়ে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আমেজ নিয়ে টি-২০ লড়াই শুরু করে বাংলাদেশ। তবে এই ফরম্যাটের শুরুতে টস জয় করা হলো না টাইগারদের। তাই টস হেরে প্রথমে ব্যাট হাতে নামতে হয় সফরকারীদের।
ওয়ানডে সিরিজে ২৮৭ রান করে সেরা খেলোয়াড় হওয়া তামিম ইকবাল ইনিংস শুরু করেন সৌম্য সরকারকে নিয়ে। বল হাতে ইনিংস শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অফ-স্পিনার অ্যাশলে নার্স। সীমিত ওভারের ম্যাচে তামিমকে যেখানে দেখা গেছে বুঝে শুনে খেলতে সেখানে এই ফরম্যাটেও ভালো কিছুই তার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিলো ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু ইনিংসে প্রথম বলেই উইকেট ছেড়ে খেলতে এসে স্টাম্পড হন তামিম। শূন্য হাতে ফেরেন চলতি সফরে ওয়ানডে সিরিজে দু’টি সেঞ্চুরি ও ১টি হাফ-সেঞ্চুরি করা তামিম। টি-২০ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম বলে আউট হলেন বাংলাদশের এই ড্যাশিং ওপেনার।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারি মারেন লিটন দাস। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারকে। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে আউট হন তিনিও। তাই তামিমের মতো শূন্য হাতে ফিরতে হলো সৌম্যকে। অবশ্য তামিমের মত ভুল করেননি তিনি। উইকেটে দাঁড়িয়ে থেকেও নার্সের অফ-স্টাম্পের ডেলিভারিতে বলের লাইনে পা না নিয়ে বোল্ড হন সৌম্য। টি-২০ ক্যারিয়ারে তামিমের মতোই দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম বলে আউট হলেন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে পুরোপুরিই ব্যর্থ সৌম্য।
ইনিংসের প্রথম ওভারে ৬ রান তুলে ২ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লিটন ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। লিটন দেখে-শুনে খেললেও প্রতিপক্ষ বোলারদের পাল্টা আক্রমণ করেন সাকিব। এতে বাংলাদেশের রান তোলার গতি বাড়ে। তবে পাওয়া প্লের শেষ ওভারের খেই হারিয়ে ফেলেন লিটন ও সাকিব। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডান-হাতি পেসার কেমো পলকে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ২১ বলে ২৪ রান করা লিটন।
পরের বলে বিদায় ঘটেও সাকিবের। পলকে কাট করেছিলেন সাকিব। বল চলে যায় থার্ড-ম্যানে। সেখানে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন কেসরিক উইলিয়ামস। ফলে নিশ্চিত ছক্কা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন সাকিব। ১০ বল মোকাবেলা করে ৪টি চারের সহায়তায় ১৯ রান করেন তিনি। লিটন-সাকিবের জুটিতে ২৯ বল থেকে ৩৮ রান পেয়েছিলো বাংলাদেশ। তাদের কল্যানে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেটে ৪৩ রান তুলতে পারে টাইগাররা।
এরপর মুশফিকুর রহিম ও মাহমুুদুল্লাহ’র কল্যাণে রানের চাকা ঘুরতে থাকে বাংলাদেশের। মাহমুদুুল্লাহ মারমুখী হয়ে উঠেন। সপ্তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেগ-স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রির শেষ তিন বল থেকে দু’টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪ রান তুলে নেন মাহমুুদুল্লাহ। পরের ওভারে পলকে একটি ছক্কাও মারেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ এমন মারমুখী ব্যাটিং-এ নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন মুশফিকুর। কিন্তু বেশিক্ষণ খোলসের মধ্যে আটকে থাকতে পারেননি মুশি। পরপর দু’টি বলে বাউন্ডারি মেরে ১০তম ওভারের তৃতীয় বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মুশফিক। ২টি চারে ১১ বলে ১৫ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ২৪ বলে ৪৭ রান দলকে উপহার দেন মুশফিক ও মাহমুুদুল্লাহ। এতে ৯ দশমিক ২ ওভার শেষে ৯০ রান পেয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ।
কিন্তু পরের ৬৪ ডেলিভারি থেকে ৫৩ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। কারন শেষদিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এ বাংলাদেশের রানের লাগাম টেনে ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা। বিশেষভাবে উইলিয়ামস। বাংলাদেশের পতন হওয়া শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে চারটিই নিয়েছেন উইলিয়ামস। মুশফিকের পর মাহমুদুল্লাহকে দুর্দান্ত এক স্লোয়ারে বিদায় দেন উইলিয়ামস। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ বলে ৩৫ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
এছাড়াও মিরাজকে ১১ ও নাজমুল ইসলামকে ৭ রানে থামিয়ে দেন উইলিয়ামস। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ৪ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট নেন উইলিয়ামস।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হবার সাথে-সাথেই বৃষ্টি নামায় ১ ঘন্টা ১০ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টি কমে যাবার পর খেলা শুরু হলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১১ ওভারে ৯১ রান। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদির প্রথম ওভার থেকে ১০ রান তুলে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও এভিন লুইস।
তবে দ্বিতীয় ওভারে এই দু’জনকে বিদায় দেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে লুইস ও শেষ ডেলিভারিতে ফ্লেচারের বিদায় ঘটে। লুইস ২ ও ফ্লেচার ৭ রান করে ফিরেন। এই ওভারে কোন রান না দিয়েই দুই উইকেট নেন ফিজ। ফলে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ডাবল-উইকেট মেডেন নিলেন মুস্তাফিজ। এর আগে ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল উইকেট মেডেন নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি।
মুস্তাফিজের ডাবল আঘাতে প্রথম ২ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১০ রান সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব পালন করেন তিন নম্বরে নামা আন্দ্রে রাসেল ও চার নম্বরে নামা মারলন স্যামুয়েলস। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিবের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভার থেকে ১৪ রান নেন তারা। ষষ্ঠ ওভারর প্রথম বলে দলের স্কোর ৫০ রানে পৌছে দিতে সক্ষম হন রাসেল-স্যামুয়েলস। ফলে ম্যাচে ফিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কিন্তু ঐ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের ডান-হাতি পেসার রুবেল হোসেন। মারমুখী মেজাজে থাকা স্যামুয়েলসকে তুলে নেন রুবেল। ২টি করে ও ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রান করেন স্যামুয়েলস। রাসেলের সাথে জুটি বেধে ২২ বলে ৪২ রান দলের স্কোরে যোগ করেন স্যামুয়েলস।
স্যামুয়েলস ফিরে গেলেও ভড়কে যাননি হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যান রাসেল। ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব একাই কাঁেধ তুলে নেন তিনি। সপ্তম ওভারের ব মুস্তাফিজের ছয় ডেলিভারি থেকে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ রান তুলে দলের জয়ের পথ পরিস্কার করে ফেলেন রাসেল। শেষ পর্যন্ত ১১ বল বাকী থাকতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৩টি করে চার ও ছক্কায় ২১ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন রাসেল। অপরপ্রান্তে ২টি ছক্কায় ৯ বলে ১৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন পাওয়েল। পাওয়েলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ২১ বলে ৪১ রান যোগ করেন রাসেল।
মুস্তাফিজ ২ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট নেন। ২ ওভারে ১৩ রানে ১ উইকেট নেন রুবেল। বল হাতে ১ উইকেট ও ব্যাট হাতে ২১ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাসেল।
আগামী ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল স্টাস্পড রামদিন ব নার্স ০
সৌম্য সরকার বোল্ড ব নার্স ০
লিটন দাস ক ফ্লেচার ব পল ২৪
সাকিব আল হাসান ক উইলিয়ামস ব পল ১৯
মুশফিকুর রহিম ক পাওয়েল ব উইলিয়ামস ১৫
মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব উইলিয়ামস ৩৫
আরিফুল হক বোল্ড ব রাসেল ১৫
মেহেদি হাসান মিরাজ ক নার্স ব উইলিয়ামস ১১
নাজমুল ইসলাম ক রামদিন ব উইলিয়ামস ৭
রুবেল হোসেন অপরাজিত ২
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ৩
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-১০) ১২
মোট (৯ উইকেট, ২০ ওভার) ১৪৩
উইকেট পতন : ১/০ (তামিম), ২/৫ (সৌম্য), ৩/৪৩ (লিটন), ৪/৪৩ (সাকিব), ৫/৯০ (মুশফিক), ৬/১১৬ (আরিফুল), ৭/১২৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৮/১৩২ (মিরাজ), ৭/১৩৭ (নাজমুল)।
বোলিং :
অ্যাশলে নার্স : ১-০-৬-২,
আন্দ্রে রাসেল : ৪-০-২৭-১,
স্যামুয়েল বদ্রি : ৩-০-৩৫-০,
কেমো পল : ৪-০-২৪-২ (ও-৪),
কার্লোস ব্র্যাথওয়েট : ৪-০-২১-০ (ও-১),
কেসরিক উইলিয়ামস : ৪-০-২৮-৪ (ও-১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস (বৃষ্টি আইনে ১১ ওভারে টার্গেট ৯১ রান) :
আন্দ্রে ফ্লেচার ক মুশফিকুর ব মুস্তাফিজ ৭
এভিন লুইস ক লিটন ব মুস্তাফিজ ২
আন্দ্রে রাসেল অপরাজিত ৩৫
মারলন স্যামুয়েলস ক মাহমুদুল্লাহ ব রুবেল ২৬
রোভম্যান পাওয়েল অপরাজিত ১৫
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-১, ও-৬) ৮
মোট (৩ উইকেট, ৯.১ ওভার ) : ৯৩
উইকেট পতন : ১/১০ (লুইস), ২/১০ (ফ্লেচার), ৩/৫২ (স্যামুয়েলস)।
বোলিং :
মিরাজ : ১-০-৯-০,
মুস্তাফিজুর : ২-১-১৮-২,
সাকিব : ২.১-০-২৭-০ (ও-১),
নাজমুল : ২-০-২৪-০,
রুবেল : ২-০-১৩-১ (ও-১)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ম্যাচ সেরা : আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
বাসস/এএমটি/১০৫৫/-স্বব