মেহেরপুরে স্মার্টফোনে মেতে থাকছে কিশোররা

973

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবন্ধ থাকায় মেহেরপুরের আনাচে কানাচে এখন শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোনে মেতে থাকছে। অনেক শিক্ষার্থী সারারাত থাকছে ফোনে। তথ্যপ্রযুক্তির জনজীবনে গতিশীলতার সাথে অপব্যবহারের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দিন দিন শিশু থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠসহ সব বয়সীদের মাঝে স্মার্টফোন আসক্তি এখন চরম পর্যায়ে। শিশু-কিশোরেরা পড়ার টেবিলে মুঠোফোনেই সময় বেশি ব্যয় করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুক, বিভিন্ন ধরণের গেম কাজের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। শিশুরা পর্নো সাইডে ঢুকে পড়ছে। অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে শিশুরা।
যেসব ছেলে মেয়ে ইতোমধ্যে স্মার্টফোনে আসক্তি হয়ে পড়েছে তাদের কাছ থেকে অভিভাবক ফোন নিয়ে নিলে উত্তেজিত হয়ে পড়ছে শিশু কিশোরেরা। রাত জেগে স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে বা ইন্টারনেটে সময় ব্যয় করেছে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উপরে পড়ছে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব। ক্লাসে বা পড়শুনায় ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারছেনা। অন্যদিকে প্রাপ্ত বয়স্করাও অফিস চলাকালীন সময়ে কাজবাদ দিয়ে পড়ে থাকছেন ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইউটিউবে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দৈনন্দিন কাজকর্ম। প্রাইভেট পড়তে যাওয়া আসার পথে ও শিক্ষার্থীরা পথ না দেখে স্মার্ট ফোনে চোখ রেখে চলাচল করছে। এতে করে পথ দুঘটনা মারাত্মক ভাবে বেড়ে গেছে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীর অনেকেই বলেছেন- নিজেদের মত করে সময় ফেসবুকে ব্যয় করেন। মেহেরপুর সদর উপজেলার পল্লী রাজনগর গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্মার্টফোনে একদল কিশোরকে দীর্ঘ সময় ডুবে থাকতে দেখা যায়।
মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন- ভার্চুয়াল জুমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী জুমে কয়েক মিনিটের জন্য এসেই হারিয়ে যায়।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের রাস্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল আমীন মাদকাসক্তির সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আসক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেন। ফেসবুক বা ইন্টারনেট ব্যবহার আসক্তির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আমরা এটাকে বলি ‘নেট এডিকশন ডিসঅর্ডার’। মানুষ যেভাবেই ন্টারনেটে ঝুঁকে পড়ছে তা সত্যিকার অর্থেই আসক্তির মত।
সমাজকর্মী মাহাবুবুল হক মন্টু এ প্রসঙ্গে বলেন- স্মার্ট ফোন শুধুশিশুদেরই নয় এটি আমাদের স্বাভাবিককাজেওপ্রতিবন্ধকতাসৃষ্টিকরছে। শিশু-কিশোরদের জন্য মুঠোফোন নয়। শিশুদের মানসিকতা বিকাশের অন্তরায় এ ইন্টারনেট। সবকিছুরই ভালো এবং মন্দ দুই দিক থাকে। প্রযুক্তির ও খারাপ দিক আছে। সেটিকে ভালো ভাবে ব্যবহার করার দায়িত্ব আমাদেরই।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মখলেসুর রহমান জানান- অতিরিক্ত সময় মোবাইল ব্যবহারে কানে কম শোনা, ক্ষুধামন্দা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, চোখে কমদেখাসহ বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন- সেল ফোনের অধিক ব্যবহারে শারীরিক কর্মকা- কমে যায় এবং ফিটনেসের জন্য হুমকি। অনেকেই আবার স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেটের কল্যাণে নিজেই ডাক্তার বনে যান। ইউটিউবের ভিডিও দেখে ফার্মেসী থেকে নিয়ে আসেন ওষুধ। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফলাফল হয় ভয়াবহ। স্মাটর্ ফোন ব্যবহারের কারণে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলছে। অতিরিক্ত মুঠোফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ও বাড়ছে।