দেশে করোনা সংক্রমণ কমেছে : বেড়েছে সুস্থতা

362

ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমেছে এবং সুস্থতা বেড়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ হাজার ৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৯২৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২২৯ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৪ হাজার ৪২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ১৫৮ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ২ শতাংশ কম।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৬ লাখ ৫ হাজার ১১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ লাখ ২১ হাজার ৬১৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ২০ দশমিক ০৮ শতাংশ।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২১১ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ১৯১ জন।
আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৬৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ৪ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৩ জন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ৪১২ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত ৩০ আগস্ট থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৯ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৬১৭ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ২৪৮টি নমুনা কম সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৯৩টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে
১৩ হাজার ৭৩ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪২২ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৫৩টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।’
২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ২৯ জনের মধ্যে পুরুষ ২২ জন, আর নারী ৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মোট পুরুষ মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৪৫৪ জন; যা ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী মারা গেছেন ৯৫৮ জন; যা ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২৯ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৭ জন, আর বাড়িতে ২ জন।
২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিবেচনায় দেখা যায়, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১৯ জন; যা দশমিক ৪৩ শতংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৩৭ জন; যা দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১০৫ জন; যা ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ২৬৭ জন; যা ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৫৮৫ জন; যা ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১ হাজার ২০৮ জন; যা ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সের রয়েছেন ২ হাজার ১৯১ জন; যা ৪৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যায় ২৯ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১৪ জন, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন করে, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন এবং বরিশাল বিভাগে রয়েছেন ৩ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২ হাজার ১৩৪ জন; যা ৪৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৫২ জন; যা ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ২৯৫ জন; যা ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৩৬৫ জন; যা ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ১৭২ জন; যা ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ১৯৭ জন; যা ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ২০২ জন; যা ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৯৫ জন; যা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হওয়া ২ হাজার ২১১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১ হাজার ১০৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭২ জন, রংপুর বিভাগে ৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৯১ জন, বরিশাল বিভাগে ৭০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩৮ জন, সিলেট বিভাগে ১৭৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮০ জন রয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪০১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ৬৭৬ জন। ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৯৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৮৯০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৫৬৬ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৩ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘন্টায় ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৩৮৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ৮৪১ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৪৭২ জন।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৬ জন ও শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ১৮০টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩১০টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ১৯৪ জন ও শয্যা খালি আছে ১১৬টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগী ১৫৭ জন ও শয্যা খালি আছে ৬২৫টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৬ জন ও শয্যা খালি আছে ২৩টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৪২৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগী ১ হাজার ৫৬৭ জন ও শয্যা খালি আছে ৫ হাজার ৮৫৯টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২০১টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১০৩ জন ও শয্যা খালি আছে ৯৮টি । সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৭৪টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৭১০ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৬৬৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৫০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩১৩ জন এবং খালি আছে ২৩৭টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১৩ হাজার ১১টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৪৯০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৮০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া www.dghs.gov.bd এর CORONA কর্ণারে ‘করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ’ লিঙ্ক অথবা http:/app.dghs.gov.bd/covid19-complain লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫৭৮টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ২৯৫টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫০ হাজার ৯০৭টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৫১টি।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৫ হাজার ৫৬৮ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭১৬ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৪ হাজার ৪০৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫২১ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ লাখ ৯ হাজার ২১০ জন এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৯ হাজার ৬৯৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৫৯ হাজার ১৩০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।