বাজিস-১ : জয়পুরহাটের মাটিতে তাইওয়ানের তরমুজ চাষে সফলতা অর্জন

216

বাজিস-১
জয়পুরহাট-তরমুজ
জয়পুরহাটের মাটিতে তাইওয়ানের তরমুজ চাষে সফলতা অর্জন
॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ২৯ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা হিসাবে পরিচিত ও বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে খ্যাত জয়পুরহাটে এবার তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন স্থানীয় এক বর্গাচাষী এনামুল হক। বর্তমান তার জমিতে ছোট-বড় কয়েকশ তরমুজ গাছের ডোগায় ডোগায় ঝুলছে।
বিদেশি তরমুজ চাষী এনামুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর দিকে উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতিদর্গাপাড়া গ্রামের বর্গা চাষী এনামুল হক নিজস্ব উদ্দ্যোগে ৩৩ শতাংশ উচু জমিতে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ করেন। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হলেও উষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় এ উপজেলায় কোথাও রসালো ফল তরমুজের চাষ হয় না। বরেন্দ্রভূমি হিসেবে খ্যাত কালাইয়ে এ প্রথম বিদেশী তরমুজ চাষ করে সফল কৃষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন এনামুল হক। আধুনিক পদ্ধতিতে ১ হাজার ৩শটি বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করেন ২৪ জুন । অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসাবে নয়ন জুড়ানো ছোট-বড় কয়েকশ তরমুজ এখন ডোগায় ডোগায় ঝুলে আছে। বিষ ও ফরমালিন মুক্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ তরমুজ গুলোর রং হলুদ, খেতে সু-স্বাদ, দেখতে আকর্ষণীয় ও চাহিদা বেশি এবং লাভজনক হওয়ায় এ জাতের তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করেন অনেকেই। অসময়ের এ তরমুজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১শ টাকা কেজি। তরমুজ চাষী এনামুল হক বলেন, ৩৩শতক জমি বর্গা নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২২টি বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রাখি। এরপর জুন মাসের ২৪ তারিখে ১৮ ইঞ্চি পর পর বিদেশী তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজের বীজ রোপণ করি। বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। তারপর ৭৫ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডোগায় ডোগায় ঝুলে পড়ে তরমুজ। বর্তমানে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের প্রায় ২ হাজার ৪শ তরমুজ রয়েছে। তরমুজের ভিতরে লাল , রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সু-স্বাদ। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ মাসেই সব তরমুজ বিক্রি হবে। তরমুজ চাষে প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হলেও দাম ভাল থাকায় প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করবেন এমন প্রত্যাশার কথা জানান এনামুল হক।
স্থানীয় কৃষক নুরুল মিয়া ও আব্দুল খালেক জানান, অসময়ে তরমুজ চাষ দেখে অনেকেই লোকসানের কথা চিন্তা করলেও তরমুজ চাষ করে অতিরিক্ত ফলন পাওয়া ও স্বাদ ভালো হাওয়ায় এখন অনেকেই আগ্রহ ভরে পরামর্শ নিতে আসছেন । এনামুলের মতো তারাও এখন ভাবছেন, ঐ তরমুজের চাষ করবেন। বিদেশি তরমুজ চাষের খবরে অন্য এলাকা থেকে লোকজন আসছেন এক নজর দেখার জন্য। আবার কেউ তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উদয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জেবা বলেন, এ উপজেলার কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশী অগ্রহী। ধান ও আলুর চাষাবাদ ছাড়াও অনেক ধরনের ফল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায় সেই চেষ্টাই আমরা এলাকায় একটি আধুনিক তরমুজ চাষ সৃষ্টি করেছি। সেই তরমুজ চাষ করে বর্তমান আমরা সফল হয়েছি। সেই সঙ্গে ঐ তরমুজ নিয়ে এলাকার সকল কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ তরমুজ চাষে উপজেলা কৃষি বিভাগ সর্বাতœক সহযোগিতা করেছে বলে জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জেবা।
বাসস/সংবাদদাত/০৯৫০/নূসী