চা শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বর্তমান সরকারের উদ্যোগ

2238

॥ আতাউর রহমান ॥
ঢাকা, ২৮ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সময় চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম বাঙালি হিসাবে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
এই স্বল্প সময়ের মেয়াদকালে তিনি শ্রমিকদের কল্যাণ ও চা বোর্ডের উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তিনি চা বোর্ডের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য রাজধানীর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় শূন্য দশমিক ৩৭১২ একর জমির ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর দিকনির্দেশনায় উক্ত ভূমিতে চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়।
তিনি ১৯৫৭ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি রিসার্চ স্টেশনের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করে উচ্চ ফলনশীল জাতের (ক্লোন) চা গাছ উদ্ভাবনের নির্দেশনা প্রদান করেন। চায়ের উচ্চফলন নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের কর্ণফুলি এবং শ্রীমঙ্গলস্থ ভাড়াউড়া চা বাগানে উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তিনি ‘টি অ্যাক্ট-১৯৫০’ সংশোধনের মাধ্যমে চা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) চালু করেছিলেন, যা এখনও চালু রয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু পরিত্যক্ত ৩৯টি চা বাগান পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও, যুদ্ধ বিধ্বস্থ ৮টি পরিত্যক্ত বাগান ১৯৭৫ সালের মধ্যে বাগান মালিকদের কাছে পূনরায় হস্তান্তর করেছিলেন। চা বোর্ড সুত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত চা কারখানাগুলো পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ থেকে ৩০ লাখ ভারতীয় রুপি ঋণ গ্রহণ করে চা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করেছিলেন।
চা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত চা উৎপাদনকারীদের নগদ ভর্তুকি প্রদান করার পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। উক্ত সার সরবরাহ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। তিনি চা শ্রমিকদের শ্রমকল্যাণ নিশ্চিত করেছিলেন। শ্রমিকদেও জন্য বিনামূল্যে বাসস্থান, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বেবি কেয়ার সেন্টার, প্রাথমিক শিক্ষা এবং রেশন প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে চা বাগান মালিকদেরকে ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সংরক্ষণের বিষয়ে অনুমতি জ্ঞাপন করে এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করে। বর্তমানে তা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) নামে পরিচিত।
দেশের ২ লাখ ৭৮ হাজার ১৪১ দশমিক ৬৯ একর জমিতে ১৬৭টি চা বাগানে গতবছর ৯৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ সময় দেশে অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা ছিল ৯৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন কেজি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের রিভিন্ন দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চা শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকার ‘উন্নয়নের পথনকশা’ গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন চলছে। চায়ের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ, রপ্তানি বৃদ্ধি বিষয়টি সামনে রেখে আগামী ২০২৫ সালে দেশে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম শামসুন নাহার ভূঁইয়া এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু চা শ্রমিক নয়, সকল শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণেই কাজ করে গেছেন।
আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও প্রবীণ শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান সিরাজ এই প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় এদেশের শ্রমজীবী মানুষের কথা ভাবতেন এবং যখনই সুযোগ পেয়েছেন তাদের কল্যাণে কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেছেন।