বিশ্বমানবতা সমুন্নত রাখতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পথ দেখাবে : রাবাব ফাতিমা

444

ঢাকা, ১৬ আগস্ট ২০২০(বাসস) : জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেছেন, বিশ্বমানবতাকে সমুন্নত রাখতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও ত্যাগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পথ দেখাবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে যথাযোগ্য মর্যাদা ওÍ ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি শনিবার এ কথা বলেন। মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১১ টায় আয়োজন করা হয় জাতীয় শোক দিবসের এ অনুষ্ঠান।
এর আগে স্থায়ী মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু করা হয়। এসময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই
জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং শহীদ পরিবারবর্গসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
মোনাজাতের পর বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার নেতৃত্বে মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শণ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে এবারের জাতীয় শোক দিবসের এ অনুষ্ঠান বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো দেয়া জাতির পিতার বাংলায় ভাষণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজ পৃথিবীর সব দেশ এজেন্ডা ২০৩০ এর ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে এর অধিকাংশের কথাই রয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে দেয়া জাতির পিতার সেই ভাষণে শিক্ষা, সাম্যতা এবং সম্মানজনক জীবন ও জীবিকার কথা রয়েছে। তিনি জাতীয়তার সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতাকে স্পর্শ করেছেন।
তাঁর এই ভাষণে ফুটে উঠেছে বিশ্ব মানবতার আশা আকাঙ্খা। তিনি শান্তির কথা বলেছেন, মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন, বহুপাক্ষিকতার কথা বলেছেন, উন্নত বিশ্ব ব্যবস্থার কথা বলেছেন, মানুষের ন্যায় সঙ্গত অধিকারের কথা বলেছেন। এমন ভাষণ কেবল তাঁর মতো একজন বিশ্বনেতার পক্ষেই দেয়া সম্ভব।
পঁচাত্তরের পনের আগস্টের প্রেক্ষাপটসহ জাতির পিতার জীবন ও কর্ম তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “জাতির পিতার এ আদর্শ ও দেশপ্রেমের নিরন্তর অনুশীলন প্রয়োজন। জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, মুজিব গ্রাফিক্স নোবেল আজ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিলে পরিণত হয়েছে। এ সব বই পড়তে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রতিনিয়ত জাতির পিতার জীবন ও আদর্শ চর্চার মাধ্যমেই গড়ে উঠবে দেশপ্রেমিক, উন্নত চিন্তার নতুন প্রজন্ম”।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে সকলকে আরও নিবেদিত হওয়ার আহবান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা গড়ে তুলব জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। জাতীয় শোক দিবসে এটাই হোক আমাদের অংগীকার”।
দিবস উপলক্ষে বাণী প্রদান করেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অজৌলে। বাণীতে তিনি বলেন, মানুষের অধিকার আদায় ও স্বধীনতার জন্য সংগ্রাম ও ত্যাগের যে আদর্শ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেখে গেছেন তাঁর শাহাদাতের চার দশক পরেও বিশ্ব তা স্মরণ করছে।
ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে মর্মে বাণীতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান অর্ন্তভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক সমাজের যে স্বপ্ন দেখে তা-ই যেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া ভাষণে উল্লেখ করেছেন, যা ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্যা ওর্য়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ। বক্তব্যের পাশাপাশি ১৫ আগস্ট স্মরণে কবিতা পাঠ করা হয়।
আলোচনায় পনের আগস্টের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।