বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে : ওবায়দুল কাদের

2045

ঢাকা, ১৫ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদ- কার্যকর করার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ শনিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসে বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতিকে আশ্বস্ত করতে চাই, বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, পরাজিত শক্তি যখন নিজেরা দমাতে পারেনি, শত চেষ্টাতেও যারা পরাস্ত হয়েছিলো স্বাধীন বাংলার প্রাণ প্রাচুর্যের কাছে। তখনই তারা প্রগতির পথ রুদ্ধ করতে ইতিহাসের সেই ঘৃণ্য কালো অধ্যায় রচনা করেন জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিকামী বাঙালির সেই পুরনো ক্ষত জাগ্রত হবার দিন ১৫ই আগস্ট। ভারাক্রান্ত এই দিবসের শুরুতেই শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় অবিসংবাদিত এই নেতাকে।
এদিকে দুপুরে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের যাতে সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার না হয়, সে জন্য বিভিন্ন সময়ে জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর দল বিএনপি বিরোধিতা করেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ কথা আর কারো বুঝতে বাকি নেই, জাতির পিতাকে হত্যার মূল লক্ষ্য ছিল একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। আর স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পথচলা থামিয়ে দেওয়া। তারা একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল, কারণ তিনি তদানীন্তন পরাশক্তি তথা বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে এক দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
শুধু বাংলাদেশ নামটি অক্ষত রেখে চিরায়ত পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনার লক্ষ্যেই ১৫ই আগস্টের হত্যাকা- ঘটানো হয়েছিল উল্লেখ করে ওবায়দুল বলেন, ‘আগস্ট হত্যার পরিকল্পনাকারীদের পরামর্শে খুনি মোশতাক কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ সব অবৈধ ও অসাংবিধানিক বিষয়কে বৈধতা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। এরপর প্রায় দুই যুগ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ ছিল।’
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘পরবর্তী সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করতে দেয়নি। তারা হত্যকারীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৯১ সালে সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি তুলেছিলাম। বিএনপি তখন বলেছিল, এই অধ্যাদেশ বাতিল করা যাবে না। কারণ, এটি পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি, এটি একটি সাধারণ আইন, যা সংশোধনের মেজরিটি দিয়ে বাতিল করা যায়। বিএনপির পাঁচ বছরের মেয়াদে জাতির পিতার হত্যার বিচারে কোনো কাজ করেনি, বরং খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি পরবর্তী সময়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি রশিদকে তারা বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এভাবে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করেছিলাম। কিন্তু আবারও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিচারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বহুল প্রতীক্ষিত বিচার সম্পন্ন হয়। মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত কয়েকজন খুনি বিদেশে পলাতক থাকায় সবার মৃত্যুদ- কার্যকর হয়নি। অনেকেরই মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। যে পাঁচজন বিদেশের মাটিতে পালিয়ে রয়েছে, তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সহযোগিতা চেয়েছি। আমাদের প্রয়াস এবং কূটনীতির উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়েছিল। এ হত্যাকা-ে বিশ্ব স্তম্ভিত হয়েছিল। ইংল্যান্ডের স্যার মাস উইলিয়ম ইউসির নেতৃত্বে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল। তারা বাংলাদেশে আসতে চাইলে জিয়াউর রহমান তাদের ভিসা দেয়নি।
১৫ই আগস্ট বাঙালি জাতির সবচেয়ে কলঙ্কের দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমের কিছু দুষ্কৃতকারী মহান এই নেতাকে হত্যা করে। এবারের শোক দিবসটি আমাদের কাছে অধিক তাৎপর্যময় কারণ, এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। যারা ভুয়া জন্মদিনে কেক কাটত, এবার না কেটে জাতিকে এক অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে। এটি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় বলে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় ওবায়দুল কাদের ১৫ আগস্টে নিহত সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকিরের সভাপতিত্বে সভায় তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ইউএস-বাংলা গ্রুপের সিইও লে. জে. মো. মইনুল ইসলাম (অব.) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বক্তৃতা করেন।
তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান বলেন, হাজার বছরের এই বাংলায় অনেকেই সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করছেন। কিন্তু আন্দোলন করে বাঙালির মুক্তি একমাত্র বঙ্গবন্ধুই এনে দিয়েছেন। তিনি বাঙালি জাতিসত্ত্বার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অথচ কাপুরুষরা তাঁকে বাঁচতে দেয়নি। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিকসহ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকারের সফলতার নানা দিক আলোচনা করেন।