দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মারা গেছেন ৩৯ জন, সুস্থ ২,০৭৪

411

ঢাকা, ৬ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৫২তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৪ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৬ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৩ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৩০৬ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতকালও মৃত্যুর হার একই ছিল।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক রিয়াজ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৪ জন। গতকালের চেয়ে ৪৮৪ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৯০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮২৪ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
নিপসম পরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৭০৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৯৭৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩২৩ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১১ হাজার ১৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৬৫৪ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৩৫ শতাংশ কম।
ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ১৮৯ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৯৬৪ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ২২৫টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮৩টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৭০৮ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১১ হাজার ১৬০ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৫৪৮টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। এখন পর্যন্ত পুরুষ ২ হাজার ৬০৬ জন; ৭৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ৭শ’ জন; ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০ জন এবং ৯ জন বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছে।
ডা. রিয়াজ বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন এবং অন্যান্য বয়সের ১০ জন। এ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক মৃত্যুর হার ষাটোর্ধ সর্বোচ্চ সংখ্যক ১ হাজার ৫৪৯ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সের ৯৪৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৪৫৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের ২১৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
তিনি জানান, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, রাজশাহীতে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন এবং ময়মনসিংহে ১ জন। এ পর্যন্ত বিভাগ ভিত্তিক মৃত্যু সংখ্যা এবং শতকরা হারে দেখা গেছে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৫৮৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০২ জন, খুলনা বিভাগে ২৪২ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩০ জন, সিলেট বিভাগে ১৫৬ জন, রংপুর বিভাগে ১৩০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭১ জন। শতকরা হারে সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৪৭ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ ২৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
নিপসম পরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৩২টি, ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১০৭ জন, শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৯২৫টি। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০১, ভর্তি আছে ১৭৯ জন, শয্যা খালি আছে ১২২টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৩৩ জন, শয্যা খালি রয়েছে ৫৪৯টি। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩৯টি, রোগী ভর্তি আছে ২২ জন, শয্যা খালি রয়েছে ১৭টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৭ হাজার ৪৩৪টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯ জন, শয্যা খালি রয়েছে ৫ হাজার ৭৯৫টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯১ জন, শয্যা খালি রয়েছে ১০৮টি। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪৮টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৯৭৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ২৬৯টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩৯টি, রোগী ভর্তি আছে ২৯২ জন এবং খালি আছে ২৪৭টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২০টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩৪৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৬০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৯৫৫ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৬৭৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৩৬ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৬৮৬ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫৪ হাজার ৩৬০ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৩৯৯ জনকে। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৯১৯ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৮ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৮৩০ জন।
অধ্যাপক ড. রিয়াজ জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৫৫টি, মজুদ রয়েছে ৪৩ হাজার ৭৮০টি। বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১৩৬টি, মজুদ রয়েছে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৬টি। কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ২৬টি, মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬৯২টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৪২টি ও মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৪টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৬১টি, এই নম্বরে এ পর্যন্ত কল এসেছে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৮টি। ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬১ হাজার ৪৫টি, এই নম্বরে এ পর্যন্ত কল এসেছে ১ কোটি ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪৪৫টি, এ পর্যন্ত কল এসেছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৯২৬টি। সবকটি হটলাইনে গত ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫১টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৬৮টি।
নিপসম পরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৩২৯ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৫০ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৫৬৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৩ হাজার ৫৭১ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৭৭৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৬৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬ হাজার ৭০৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ১১৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৪৭ জন বলে তিনি জানান।