দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩৩ জন, সুস্থ ১,৮৯০

415

ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৫১তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৯০ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ১৭ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ২৬৭ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতকাল মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ কম।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৯০ জন। গতকালের চেয়ে ৬৫ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৯৫৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১১ হাজার ১৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৫৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৭৩৬ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ৭ হাজার ৭৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৯১৮ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ১২ হাজার ৪১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ০৯ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১১ হাজার ৯৬৪ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ৮ হাজার ১২৩ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৩ হাজার ৮৪১টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮৩টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ১৬০ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৭ হাজার ৭৭২ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩ হাজার ৩৮৮টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ জন এবং ৮ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৫৭৪ জন; ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৯৩ জন; ২১ দশমিক ২১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩১ জন এবং ২ জন বাড়িতে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন। এ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২১৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৫২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯৩৮ জন এবং ৬০ বছরের বেশি ১ হাজার ৫২৬ জন।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১ জন। বিভাগ ভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যা- ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৫৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৮৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯৯ জন, খুলনা বিভাগে ২৩৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৮ জন, সিলেট বিভাগে ১৫৪ জন, রংপুর বিভাগে ১২৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭০ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১২৭ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৮৬ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৩৮ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২১ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৭ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৫ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৯২২ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ৩১৮টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৮টি, রোগী ভর্তি আছে ৩০২ জন এবং খালি আছে ২৪৬টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২০টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩৩৪টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৬০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৫৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৪৫৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৯৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৯৫০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪০৫ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৭ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৬১৩ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩২৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৩ হাজার ৩৫০ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৫টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ২৫টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪১৪টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৫১৪টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৩ হাজার ৫১৭টি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ২৯৪ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯২১ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬৬৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ২ হাজার ৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৬৪১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৯৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৫৭৪ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৬২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৭১৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ২৭৮ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৯১ হাজার ১৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা.নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।