দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২১ জন, সুস্থ ১,১১৭

392

ঢাকা, ১ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৪৭তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১১৭ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৭ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ২৮ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ১৩২ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত ২৬ জুলাই থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১১৭ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৫৯ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ২ হাজার ১৭৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৩ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৫ শতাংশ কম।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৮ হাজার ৮০২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ১৯৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৫৭৩ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ৬১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৭২ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৬১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ৩ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৮ হাজার ৬৬৯ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ১৭০ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৪ হাজার ৫০১টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮ হাজার ৮০২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৬১৪ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩ হাজার ৮১২টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ জন এবং ৫ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৬৬২ জন; ৭৮ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং নারী ৬৭০ জন; ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২০ জন এবং ১ জন বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২ জন। এ পর্যন্ত শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন; যা দশমিক ৫৭ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩২ জন; যা ১ দশমিক ০২ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৭ জন; যা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২০৫ জন; যা ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৩৮ জন, যা ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯০১ জন, যা ২৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ষাটের অধিক ১ হাজার ৪৫১ জন, যা ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায় ঢাকা বিভাগে ৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন। এ পর্যন্ত বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা এবং শতকরা হারে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৯৭ জন; যা ৪৭ দশমিক ৮০ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৬২ জন, যা ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ; রাজশাহীতে ১৮৬ জন, যা ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২২৬ জন, যা ৭ দশমিক ২২ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১২৪ জন, যা ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৫১ জন, যা ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১১৮ জন, যা ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৮ জন, যা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৪ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৮৮ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৫৩ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২২ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৪ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১১০ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৮৬১ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ৩৭৯টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৫০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩২০ জন এবং খালি আছে ২৩০ টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫২টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩১৭টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৫৭টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৭১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৫৮১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫শ’ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯শ’ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫১ হাজার ৪৮১ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৫ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৪১ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২০৭ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮৬৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ২৭২ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৭৬টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৩৪৫টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৫৯৫টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮১৬টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭১টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৩২৮টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৩১৩টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬১ হাজার ৭১২টি। এখন থেকে আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫ নম্বরটি খোলা থাকবে বাকি নম্বরগুলো বন্ধ থাকবে ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ১ হাজার ৬২৮ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৭ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৭০২ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৯৪ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ১১৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৯ হাজার ৯৬৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯১৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৩১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯২ হাজার ৫২৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭১ লাখ ৬ হাজার ৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ৮১২ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯১০ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।